আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে প্রায় সাতশো কোটি মানুষ। আর এই সাতশো কোটি মানুষের প্রত্যেকেই একে অন্যের চাইতে আলাদা। চিন্তা-ভাবনা, আচরণ, অভ্যাস থেকে শুরু করে জীবন সম্পর্কে বিশ্বাস- সবটাতেই নিজের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে নেয় সবাই। আর পছন্দ করে নিজের মতন করে থাকতে। তবে কিছু মানুষ আছেন যাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো কেবল তারাই নন, অনুসরণ করতে পছন্দ করে আরো অনেকে। আর আজকেই এই ফিচারে উল্লেখ করা হল অনেকের মাঝে সফল আর অনুকরণীয় এরকম কিছু মানুষের নিজস্ব ও ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনাকে।
১. কর্মই সাফল্য
অনেকে ভাবতে পছন্দ করেন যে সফলরা সাধারণের চাইতে একটু বেশি কিছু। দক্ষতা, চিন্তার পরিধি, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা অন্যদের চাইতে এগিয়ে। ফলে সবার পক্ষে সফল হয়ে ওঠা সম্ভবপর নয়। সত্যি বলতে কি, প্রথম দেখায় সফল মানুষদের কাজকে বাইরে থেকে মনে হয় তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সঠিক পথে এগিয়েছিলেন, লক্ষ্যকে অনেক নিখুঁতভাবে চিনে দৃঢ়তার সাথে কাজগুলো করে গিয়েছিলেন বলেই তারা সফল। আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়। সফল হবার জন্যে মানুষের যেটা দরকার সেটা হল তার আত্মবিশ্বাস আর কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা। যে কোন কাজের জন্যেই আত্মবিশ্বাস যথেষ্ট। শুধু এ ক্ষেত্রে অন্যের সাথে নয়, কাজের পরিধির সাথে নিজেকে তুলনা করাটা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত যে, কাজ করলে সফলতা আসবেই।
২. নিজেরাই যথেষ্ট
সফল মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে কারো জন্যে বসে থাকাটা মোটেও কাজের কথা নয়। কেউ এসে বলে যাবে যে তুমি এটা করতে পারবে বা ওটা তোমার কাজের জায়গা, সে জন্যে বসে না থেকে নিজেই নিজেকে যাচাই করা উচিত। নিজেকে নিজের চাইতে ভালো আর কেউ চিনবেনা। আর তাই আপনি কী করতে পারবেন বা কোথায় কাজ করবেন সেটার জন্যে অন্যের অপেক্ষা না করে নিজেই যাচাই করুন নিজেকে আর লেগে পড়ুন কাজে। যা নিজে করতে পারবেন সেটা অন্যের জন্য ফেলে রাখা কেন?
৩. দশে মিলে করি কাজ
সফল মানুষের কথা পড়লে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে তারা কেবল নিজেদেরকে নিয়েই ভাবেন না। নিজেদের চাহিদা নিয়ে না বসে থেকে চারপাশে তাকিয়ে দেখেন তারা। চেষ্টা করেন অন্য কর্মচারীদেরকেও সুযোগ দিতে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে। একটা কথা সবসময়েই মনে রাখেন সফল মানুষেরা যে তারা একা কিছুই নন এবং কিছু হতেও পারবেননা। আর তাই সবার সাথে মিলে তারা কাজ করতে ভালোবাসেন।
৪. শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা
অন্যেরা অনেক বেশি প্রতিভাবান হতে পারেন, সৃষ্টিশীল কিংবা দক্ষ হতে পারেন। কিন্তু তাই বলে আপনি যে কিছুই নন তা কিন্তু নয়। হতাশ না হয়ে নিজের যা আছে সেটাকে নিয়ে, নিজের চিন্তা আর বিশ্বাসকে নিয়ে এগিয়ে যান। শেষ অব্দি আপনারই জয় হবে। দ্রুতগতিতে দৌড়ে কোন লাভ নেই যদি না আপনি শেষ অব্দি টিকে থাকতে না পারেন। আর তাই সফল মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক নিজেকে পাল্টে ফেলা বা থেমে যাওয়াটা কোন কাজের কথা হতে পারেনা। এসবকিছুকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়াটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
৫. প্রতিদিন কাজ করা
সফলেরা কখনোই বেকার বসে থাকেন না। একদিনে অনেক কাজ করে বাকি দিনগুলো বসে থাকাটা মোটেই ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসেনা। আর তাই তারা প্রতিদিনই কিছু না কিছু কাজ করে থাকেন। হোক সেটা খুবই কম বা প্রচন্ড রকমের বেশি পরিমাণে। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেন না তারা।
৬. সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ মানুষের একটি অন্যতম বড় হাতিয়ার। কথায় বলে যার যোগাযোগ যত ভালো তার জন্যে কাজটাও তত সহজ। কিন্তু সফল মানুষেরা কেবল পরিচিতের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মন দেন না। তারা চান যেন সেই যোগাযোগটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। একশজন দূরের পরিচিতের চাইতে একজন কাছের পরিচিত মানুষ থাকা ভালো। কারণ কঠিন সময়ে ঐ একশ জন পরিচিত মানুষ আপনার কাজে আসবে না। বরং ঐ একজনই আপনাকে সাহায্য করে। তাই যোগাযোগ বাড়ানোর দিকে না তাকিয়ে সেটাকে টিকিয়ে রাখার দিকে মনযোগ দেওয়া উচিত বলেই বিশ্বাস করেন তারা।
৭. কাজের বাস্তবায়ন
মানুষ দিনে হাজারটা পরিকল্পনা করে মনে মনে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সেগুলোর ভেতরে হাতে গোনা কয়েকটাই মাত্র কাজে পরিণত হয়। আর তাই সফল মানুষেরা বিশ্বাস করেন পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়নই আসল। আর তাই অনেক বেশি পরিকল্পনা করার চেয়ে কয়েকটা সত্যিকারের বাস্তবায়ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৮. দলনেতার বৈশিষ্ট্য
সফল দলনেতা কে? যিনি খুব দ্রুত সবার জন্যে সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেন কিংবা কঠিন কঠিন কাজ খুব দ্রুততার সাথে করার সাহস দেখান? নাকি নিজের কথার মাধ্যমে, কাজের মাধ্যমে কর্মচারীদেরকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলে তাদের মনে আত্মসম্মানের জন্ম দেন? সফল মানুষদের মতে প্রথম সারির দলনেতারা কার্যকর হলেও সেটা খুব অল্প সময়ের জন্যে। দলনেতা তার হওয়া উচিত যাকে বাধ্য হয়ে সবাই অনুসরণ করেনা। বরং ভালোবেসে অনুসরন করে। আর তাই দ্বিতীয় সারির দলনেতাদেরকেই সঠিক আর দীর্ঘস্থায়ী ও সত্যিকারের দলনেতা বলে মনে করেন তারা।
সফল মানুষেরা মনে করেন পরিশ্রম আর পারিশ্রমিকের ভেতরে পরিশ্রমই প্রথমে আসে। আমরা সফলদেরকে চিনি কারণ এখন তারা সফল। কিন্তু শুরুতে তারা এরকম ছিলেন না। প্রচন্ড পরিশ্রমের মাধ্যমেই আজকের এই জায়গায় পৌঁছেছেন তারা। কিন্তু অনেকেই কাজ না করে বেশি পেতে চায়। এবং খুব তাড়াতাড়িই সফল হতে চায়। কিন্তু সফলেরা বিশ্বাস করেন পুরষ্কার পেতে হলে প্রথমে ভালো কাজ করার ব্যাপারটা চলে আসে।
যারা এখন অব্দি সফল হয়েছেন তারা তাদের বর্তমান জায়গাতে এসে পৌঁছতে পেরেছেন, সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন- কারণ তারা সবসময়ই বিশ্বাস করেছেন যে পুরো পৃথিবী না হোক, এর একটা অংশ হলেও তারা পরিবর্তন করতে পারবেন। কেবল নিজেদের জন্যে নয়। তাদের লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর জন্যে কিছু করা। পৃথিবীর মানুষের জন্যে কিছু করা। আর তারা বিশ্বাস করতেন তারা সেটা পারবেন। তাই সফলতাও তাদের কাছ থেকে তাই বেশিদিন দূরে থাকেনি।