টিভি মাইক্রোফোনে ভেসে আসছিল ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা নাম না জানা এক ব্যক্তির কণ্ঠ, ‘এভাবে আউট হয় নাকি?’
হয়। অদ্ভুতুড়ে, তবে এভাবেও রান আউট হয়। শেষ ওভার বল করতে এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিমো পল। দৌড়ে এসে আম্পায়ারকে অতিক্রম করে লাফও দিলেন। কিন্তু বল ডেলিভারি না করে লাগিয়ে দিলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে! সমস্বরে আবেদন। তৃতীয় আম্পায়ার টিভি রিপ্লেতে দেখলেন, নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান রিচার্ড এনগাভারা ক্রিজের বাইরে চলে গিয়েছিলেন বল ডেলিভারির আগেই। স্টাম্পে যখন লাগানো হলো, ব্যাট মাত্রই সীমা অতিক্রম করেছে। রান আউট!
৬ বল বাকি, জিততে হলে ৩ রান দরকার জিম্বাবুয়ের, হাতে ১ উইকেট। জিতলেই তারা যাবে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, বাদ পড়বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টান টান উত্তেজনার এমন ম্যাচ, তার শেষ হলো কিনা এভাবে!
গ্রুপে দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল ২। জয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালে—এই সমীকরণ সামনে কাল চট্টগ্রামে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ক্যারিবীয়দের দেওয়া ২২৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। এরপরই এই বিতর্ক।
এমন উত্তেজনার ম্যাচ, বিশ্বকাপে থাকা না-থাকা নির্ধারণ হবে যে ম্যাচে, তার এমন সমাপ্তি! ক্রিকেটে লড়াইটা হয় ব্যাটে বলে। এখানে ঠিক লড়াইটা ওভাবে ব্যাটে বলে হলো না। হলো ক্রিকেটের এক অদ্ভুত আউটে, যে আউট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই খুব বিরল। ক্রিকেটের পরিভাষায় যে আউটগুলোকে বলা হয় ‘মানকাডেড’। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে যে আউট হয়েছে মাত্র আটবার।
১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ভারতের ভিনু মানকড় দুবার (প্রস্তুতি ম্যাচ ও পরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে) অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন। এ কারণেই এই আউটের এমন নাম। ক্রিকেটের আইনে এটি আউট। তবে এটি ক্রিকেটীয় চেতনার সঙ্গে যায় কি না, এই বিতর্ক অনেক পুরোনো।
বিতর্ক হয়েছে কালও। তাতে নিরুত্তাপ যুব বিশ্বকাপ রীতিমতো আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ম্যাচ শেষে দুই ভাষ্যকার ইয়ান বিশপ আর পমি মবঙ্গওয়া ঝাঁজাল বিতর্কেই নেমে পড়েছিলেন। এমন অদ্ভুত উপায়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে বাদ যেতে হওয়ায় জিম্বাবুয়ে যেমন ম্যাচ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতও মেলায়নি। হু হু কান্নায় ভেঙে পড়েছে জিম্বাবুয়ের অনেকে। এভাবে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়তে কারইবা ভালো লাগে!
টুইটারেও সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা পক্ষে-বিপক্ষে লিখছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বশেষ এমন আউটের শিকার হওয়া ইংল্যান্ডের জস বাটলার টুইট করে লিখেছেন, ‘যা দেখলাম তা বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা লজ্জাজনক।’
দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন লিখেছেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যা হলো, এটিকে সমর্থন করতে পারছি না।’ সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিং তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুবাদের খেলোয়াড়ি মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এটা লজ্জাজনক আচরণ। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসার অবশ্য সাফাই হিসেবে বলেছেন, ‘এখানে আমাদের আবেগটা দূরে সরিয়ে রেখে ভাবতে হবে। ক্রিকেটের আইনের বাইরে তো কিছু হয়নি!’
কাল অন্য ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ উইকেটে হারিয়েছে স্কটল্যান্ডকে। তবে ‘এ’ গ্রুপ থেকে এই দুটি দলই খেলবে প্লেট পর্বে। স্টার স্পোর্টস।