লিটন দেবনাথ সৈকত। কক্সবাজার ই-শপ.কমের উদ্যোক্তা। তার সাইটের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে তিনি সারা দেশের শুঁটকি পৌঁছে দিয়ে অনেকের নজরে এসেছেন। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের ১৩টি দেশে কক্সবাজারের শুঁটকি পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। সামুদ্রিক লইট্যা, ছুরি, কোরাল, রূপচাঁদার শুঁটকি ছাড়াও বার্মিজ আচার, চকলেট, আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, শামুক-ঝিনুকের তৈরি বিভিন্ন শোপিস, হরেক রকমের প্রসাধনী অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ক্রেতার কাছে সরবরাহ করছেন লিটন………………
পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে সারাবছরই দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক ঘুরতে যান। ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে ফিরেন কক্সবাজারের শুঁটকি মাছ, বার্মিজ আচারসহ হরেক রকমের প্রসাধনী। যা কক্সবাজার ছাড়া পাওয়া দুষ্কর। এ চিন্তা থেকেই লিটনে ই-শপের যাত্রা শুরু। কারণ কক্সবাজার বেড়াতে এলেই পযর্টকদের খাবার প্লেটে পছন্দের রসনা হিসাবে এক নম্বরে থাকে সামুদ্রিক শুঁটকি। উপহার-উপঢৌকন হিসাবে শুঁটকি পাঠানোর রেওয়াজটা বেশ পুরনো। মজাদার খাবার হিসাবে শুঁটকির কদর আগে যেমন ছিল এখনও তেমন আছে। তাই কেউ কক্সবাজারে বেড়াতে এলে সবার আগে শুঁটকির খোঁজ নেয়। সেই শুঁটকির স্বাদ রসনা বিলাসীদের আরও কাছাকাছি নিতে কাজ করছে কক্সবাজার ই-শপ.কম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের এই অনলাইন শপটি আপনি চাইলে আপনার দুয়ারে হাজির করবে পছন্দের সব শুঁটকি। সরাসরি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে টাটকা এবং বিষমুক্ত শুঁটকি সংগ্রহ করে থাকে। এমনিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের দুটি পণ্যের আলাদা বিশেষত্ব আছে। শুঁটকি ও বার্মিজ আচার। এই দুটি পণ্য কক্সবাজারের বাইরে সেভাবে পাওয়া যায় না। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাওয়ার সময় কিছু শুঁটকি বা আচার নিয়ে যেতে পারলেও বরাবরই চাহিদা থাকে বেশি। এই চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর জানুয়ারিতে কক্সবাজার ই-শপ ডটকমের যাত্রা। কক্সবাজার ই-শপ শুধু একটি ইকর্মাস উদ্যোগই নয়, এটি কক্সবাজারের পণ্য সারাদেশে পরিচিত করার একটি উদ্যোগ। ফরমালিন ও বিষাক্ত কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি ও টাটকা আচার মানুষের দুয়ারে হাজির করতে কক্সবাজার ইশপ কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজার ইশপে সামুদ্রিক লইট্যা, ছুরি, কোরাল, রূপচাঁদাসহ নানা শুঁটকি ছাড়াও আচার, চকলেট, আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, শামুক-ঝিনুকের তৈরি দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য শোপিস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব পণ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছানো হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ক্যাশ অন ডেলিভারি সার্ভিস চালু হয়েছে এবং অন্যান্য জেলায় পণ্য সরাসরি হোম ডেলিভারি যাচ্ছে। অনলাইনে কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্মের একটি রিটার্ন পলিসি। কক্সবাজার ই-শপ দিচ্ছে প্রডাক্ট রিটার্ন-এর সহজ সুযোগ। ক্রেতারা চাইলে তাদের কেনা পণ্য ঢাকা ফার্মগেট ও কক্সবাজারের নিজস্ব অফিস থেকে নিতে পারেন। কক্সবাজার ই-শপের উদ্যোক্তা লিটন বলেন, সব মিলিয়ে কক্সবাজারে দোকান থেকে শুঁটকি কেনার চেয়ে কক্সবাজার ই-শপ থেকে অনলাইনে কেনা অনেক সাশ্রয়ী ও নির্ঝঞ্ঝাট। কক্সবাজার ই-শপ সরাসরি মাঠ পর্যায় থেকে শুঁটকি সংগ্রহ করে। এ কারণে ক্রয়মূল্য কম পড়ে। আর দোকানে বিক্রি হওয়া শুঁটকি কয়েক হাত বদল হয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাজারে পৌঁছতে কেজিতে দাম বেড়ে যায় ১০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। আর এই টাকা যায় ক্রেতাদের পকেট থেকে। কক্সবাজারে নতুন পর্যটক দেখলে অনেকে আবার দাম বাড়িয়ে রাখে। কক্সবাজার ই-শপ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এক দামে পণ্য বিক্রি ও স্বল্প খরচে কুরিয়ারে হোম ডেলিভারি দেয়া হয়।
কক্সবাজারের সবচেয়ে মজাদার রূপচাঁদা শুঁটকির কেজি মানভেদে ১২শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। লইট্ট্যা শুঁটকি ৬শ-৭শ টাকা, ছুরি শুঁটকি মানভেদে ৩শ থেকে ১৬শ টাকা । এর সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসের খরচ ৬০ টাকা। ক্যাশ অন ডেলিভারি হলে ৯০ টাকা। তারপরও তাদের দাম বাজারের শুঁটকির চেয়ে কম। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের পণ্যের চাহিদা বেশ। বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটার ঝামেলা অনেকেই পোহাতে চাননা। আবার কেনাকাটা করলেও পরবর্তিতে কক্সবাজার চাইলেও হাতের কাছে পণ্যগুলো পাওয়া যায় না। কেনার সময় পান না। কারণ যখন পণ্য প্রয়োজন হয়- তখন তারা কক্সবাজারে আসতে পারে না। এসব বিষয়কে মাথায় রেখে পণ্য বিপণনে নতুনত্ব এনেছে কক্সবাজার ই-শপ। নিজের উদ্যোগের পেছনের গল্প উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি জানান, ২০০৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর পারিবারিক সংকটে লিটন দেবনাথের লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। ডাক্তারের সহকারী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। ওই সময় সাইবার ক্যাফেতে ইউটিউব ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কম্পিউটারের কাজ শেখেন। ২০০৭ সালে একটি কম্পোজের দোকান দিয়ে শুরু হয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ। ব্যবসার পাশাপাশি চলে ফ্রিল্যান্সিং। ২০১০ সালে তিনি দাঁড় করান কক্সবাজারের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অন্যতম প্রতিষ্ঠান ওয়েব আর্ট আইটি। কয়েকজন ডেভেলপার নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখানেই থেমে থাকতে চাননি লিটন। কক্সবাজারে আসা পর্যটক ও তাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কক্সবাজার ই-শপ।
লিটন কক্সবাজার ই-শপ.কমকে যুক্ত করেছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সঙ্গে। এছাড়া গত ১০ এপ্রিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপের নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০১৪ পেয়েছেন লিটন দেবনাথ। কক্সবাজার ই-শপ নিয়ে লিটন দেবনাথের পরবর্তী লক্ষ্য হল বিদেশে পণ্য পাঠান। এই লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন তারা। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের ১৩টি দেশে কক্সবাজারের শুঁটকি পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লিটন দেবনাথের মতে, ই-কমার্স নিয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা পুঁজি ও কাজ করার ক্ষেত্র। উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় সরকার ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে দেশই লাভবান হবে। ভারতে ই-কমার্স নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই খাতের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। এছাড়া কক্সবাজার ই-শপ ডটকম থেকে কেন ক্রেতারা পণ্য কিনবে তার জন্য দিচ্ছে একাধিক সুবিধা। রয়েছে ক্যাশ অন ডেলিভারি, বিকাশ, ব্যাংক ট্রান্সফার, গিফট ভাউচার ইত্যাদি। ক্রেতাদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে হেল্পলাইন। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানা যাবে ওয়েবসাইট : www.coxsbazareshop.com এবং ফেসবুক পেজ : www.facebook.com/coxsbazarEshop ঠিকানায়।