কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স’ানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস’ান করা রোহিঙ্গা নাগরিকদের শুমারি কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে ‘অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শুমারি পরিচালনা করার জন্য কক্সবাজার পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, মায়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার প্রেক্ষিতে এদেশের আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য ১৯৯৮ সনে সীমান্তের নাফ নদী ও স’লপথ অতিক্রম করে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক সপরিবারে অনুপ্রবেশ করে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স’ানে আশ্রয় নেয়। এ সময় সরকার তাদের শরণার্থী মর্যাদায় খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে প্রায় ২১টি ক্যাম্প নির্মাণ করে সেখানে আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক মায়ানমারের সাথে দফায় দফায় কুটনীতিক তৎপরতা জোরদার ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপের মুখে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। শুরু হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। এ প্রত্যাবাসনের আওতায় বেশির ভাগ রোহিঙ্গা মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার এক পর্যায়ে ২০০৪ সালে হঠাৎ করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় উখিয়া ও টেকনাফের দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে আটকা পড়ে যায় প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা।
২০১০ সালে নাফ নদী অতিক্রম করে আরো প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সপরিবারে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং বনভূমির জায়গায় ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নেয়। এ সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী এসব রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ওই সব রোহিঙ্গাদের অবৈধ ঘোষণা করে তাদেরকে কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা না করার জন্য স’ানীয় এনজিওগুলোর প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ওই রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স’ানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক অবৈধ রোহিঙ্গা রয়েছে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরো দাবি করেছে। ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ব্যবস’াপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে অনিবন্ধিত মায়ানমার নাগরিকদের তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরিসংখ্যান ব্যুরো আগামী এপ্রিল মাসে শুমারি জরিপের ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত মায়ানমারের নাগকিরদের এদেশে অনুপ্রবেশের কারণ চিহ্নিত করতে অনিবন্ধিত মায়ানমার নাগরিকদের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি, তাদের ছবি ও দলিলাদি সংগ্রহ, বর্তমান অবস’ান, এদেশে অনুপ্রবেশের আগে মায়ানমারের স’ায়ী বাসস’ান নিরূপণ এবং আর্থসামাজিক পরিসংখ্যানই শুমারির প্রধান লক্ষ বলে জানা গেছে। এতে অনেক অজানা তথ্য ওঠে আসবে এবং রোহিঙ্গারা এ কারণে নানাভাবে উপকৃত হতে পারে। তাছাড়া দেশের জন্য এটি একটি মঙ্গলজনক উদ্যোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উখিয়া, কক্সবাজার ও মহেশখালী উপজেলায় শুমারির প্রথম পর্যায় ফিল্ডটেস্ট কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, সরকারের মহান উদ্যোগ রোহিঙ্গা শুমারি কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা বাইন্ডিংয়ে চলে আসবে। যদি সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সহজেই চিহ্নিত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। কক্সবাজার পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক ওয়াহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ৫টি কারণসহ শুমারি জরিপে ৪৫টি প্রশ্ন রাখা হবে। চলমান শুমারি কার্যক্রমের ফলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও এ শুমারির কারণে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।