রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে আইসিসি অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপকে ঘিরে কক্সবাজার জেলা শহরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে কক্সবাজার ভেন্যু, খেলোয়াড়দের জন্য নির্ধারিত হোটেল ও জেলা শহরের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে আজ মঙ্গলবার থেকে বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষায় জিপিএস পদ্ধতি, ভেহিকেল স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াড, ভেন্যু অপারেশন কমান্ড স্থাপনসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে। সংশ্লিষ্ঠ সূত্র এইসব তথ্য জানিয়েছে।
কক্সবাজারে এখন পর্যটনের মৌসুম চলছে। পর্যটকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে মুখর সাগরকন্যা। প্রতিবছরই এমনটা হয়। কিন্তু এবার তাতে বাড়তি উৎসব-আমেজ উপহার দিয়েছে ক্রিকেট, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ১২তম আসর। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া এ টুর্নামেন্টে আট ভেন্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭টি ম্যাচ যে অনুষ্ঠিত হবে এ শহরেই।
খেলা হবে শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সাগরপাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা অপূর্ব এক স্টেডিয়াম এটি! ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়েছিলেন, সাগরের ঢেউয়ের খেলা যেন স্টেডিয়ামে বসেও উপলব্ধি করা যায়। সেভাবেই নির্মিত হয়েছে নতুন এ স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামে স্থায়ী কোনো গ্যালারি নেই। সবুজ ঘাসে বসেই খেলা দেখবেন দর্শকরা। সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের খেলা তো আছেই!
এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো বড় আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারে। শেখ কামাল স্টেডিয়াম তাই এখন এলাকাবাসীর মনোযোগের কেন্দ্রে। স্টেডিয়ামও প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। শহরও কি নয়? পুরো শহরই এখন ক্রিকেটময়। রীতিমতো সাজসাজ রব। সেই রবে রীতিমতো দামামা বাজিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফি! গতকালই কক্সবাজারে এসেছে যুব বিশ্বকাপের ট্রফি। দোরগোড়ায় এত বড় টুর্নামেন্টের ট্রফি দেখে যারপরনাই অভিভূত কক্সবাজারবাসী। সোমবার দুপুরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় ট্রফিটি আনা হয় শহরের পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এত কাছ থেকে একটা বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় কক্সবাজারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকেরই স্বপ্ন, একদিন বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বদরবারে ক্রিকেট খেলবে তারা
খুদে শিক্ষার্থীরা যখন ট্রফি পেয়ে আন্দোলিত, তখন আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু শেখ কামাল স্টেডিয়ামে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখানে খেলা হবে দু’জায়গায়। মূল স্টেডিয়ামে আর একাডেমি মাঠে। একই সঙ্গে, বিশাল আয়তনের নতুন একটি অনুশীলন মাঠও নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে আছে ১৮টি উইকেট! এ ছাড়া অনুশীলনের জন্য একাডেমি মাঠের পাশে আরও ছয়টি উইকেট রয়েছে। মূল মাঠে আগের পাঁচটি উইকেটের সঙ্গে আরও দুটি নতুন উইকেট তৈরি করা হয়েছে। একাডেমি মাঠের আগের তিনটির সঙ্গেও যোগ হয়েছে আরও দুটি উইকেট। অনুশীলন মাঠের পাশেই খেলোয়াড়দের জন্য নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সাজঘর। এর নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। সে সঙ্গে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে পুরো স্টেডিয়ামকেই। স্টেডিয়ামের নতুন সংস্কারকাজে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। এ স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৯ জানুয়ারি। ম্যাচে স্কটল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নামিবিয়া।
স্কটল্যান্ড-নামিবিয়া হয়তো ‘ছোট’ ম্যাচ। তবে ম্যাচটি দিয়েই বড় এক অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণ স্পর্শ করবে কক্সবাজার। বড় এক মঞ্চে নতুন করে নিজেদের বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবে এ শহর। ঘোষণা করবে, সাগরকন্যার দেশে বিশ্বকাপকে স্বাগত!