বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরে গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। মাঠের ভেতরে ঢুকতে তর সইছে না! কিমো পল জয়সূচক রানটা এনে দিতেই ক্যারিবিয়ান খেলোয়াড়রা উন্মাতাল হয়ে মাঠের ভেতর ঢুকলো। কে কি করবে ভেবে পায় না বুঝি! নায়ক কিসি কার্টির দিকে ছুটছেন কেউ। কেউ লাফাচ্ছেন। কেউ গড়াগড়ি খাচ্ছেন। শামার স্প্রিঙ্গার তার ‘চেষ্ট রোল’ ড্যান্সে ব্যস্ত! গার্ডন পোপ ‘গ্যাংন্যাম স্টাইল’ চেষ্টা করলেন। অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার ও আরো কজন চুমু খাচ্ছেন উইকেটে। পাশের চিত্রটা মন খারাপ করা। ১১ ভারতীয় ঠিক যেন পরাজিত সৈনিক! তাদের হারিয়েই যে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই আমুদে যুবাদের হাত ধরেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে হয়েছে নতুন সূর্যোদয়। বুক ভেঙ্গেছে ভারতের। চতুর্থবারের মতো বিশ্ব শিরোপা জেতা হলো না তাদের। ১৯৮৩ সাল। লর্ডসে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। কপিল দেবের দলের কাছে হেরে গ্যারি সোবার্সের দলের হ্যাটট্রিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গেছিল। ৩৩ বছর পর মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে ক্রিকেটেরই যুব সংস্করণে শোধ তুললো ওয়েস্ট ইন্ডিজ! এবার শিমরন হেটমায়ারের হাতে উঠলো শিরোপা। চেয়ে চেয়ে দেখলেন ইশান কিশান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সেই গৌরব আর নেই। কিন্তু তাদের যুবাদের মধ্যে কোনও ভাবে তেজটা থেকে গেছে। ৫ পেসার এদিন তোপ দেগেছে। ভাগাভাগি করে নিয়েছে ভারতের ১০ উইকেট। ৪৫.১ ওভারে তাই ১৪৫ রানেই অল আউট ভারত। ৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতে মাথায় বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪৬ রানের টার্গেট তাড়া করে জিততেই দারুণ ঘাম ছুটেছে ক্যারিবিয়ানদের। ম্যান অব দ্য ম্যাচ কার্টি সত্যিকারের নায়কের মতোই কাজ করেছেন। অষ্টম ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট পড়ার পর এসেছেন উইকেটে। দায়িত্ব নিয়েছেন। অসীম ধৈর্য্যের একটি ইনিংস এসেছে তার কাছে। ক্ল্যাসিক বটে। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ৫২ রানে অপরাজিত তিনি। ১২৫ বল খেলেছেন। বাউন্ডারি মেরেছেন মোটে দুটি। কম যাননি কিমো পল। এই সেই পল গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়েকে বিতর্কিত ‘মানকর’ আউট করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন। নাহলে তো প্রথম রাউন্ডই পার হয় না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬৮ বলে ১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থেকেছেন পল। কার্টির সাথে তার ম্যাচ জেতানো ষষ্ঠ উইকেট জুটিটি অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের। ২০.৩ ওভার খেলেছেন তারা। পল ধন্যবাদ দিতে পারেন সরফরাজ খান ও রিশাব পান্তকে। ১০ ও ২২ রানের সময় দুটি নতুন জীবন পেয়েছেন। কিন্তু দল ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর কার্টির সাথে যেভাবে এগিয়েছেন পল, তা অনুকরণীয় বটে। হ্যাঁ, ছোট্টো পুঁজির পরও ম্যাচে ফিরে এসেছিল ভারত। বাঁ হাতি স্পিনার মায়াঙ্ক দাগার ক্যারিবিয়ানদের ইনিংসের মাঝে পরপর তিনটি আঘাত হানেন। হেটমায়ার (২৩), স্প্রিঙ্গার (৩) ও জিড গুলি (৩) দ্রুত বিদায় নিলেন। ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতীয় বোলারদের সব চাপ মাথায় নিয়ে যুব ক্রিকেটের সেরা সাফল্যটা ছিনিয়ে আনলেন কার্টি-পল। অথচ সকালে টসে হেরে ব্যাটিং গ্রেট কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত খুশিই হয়েছিল। কারণ, ব্যাটিং তাদের মূল শক্তি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু লড়াইটা যে ভারতের ব্যাটিংয়ের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিংয়ের! ম্যাচ শুরু হতেই সেই লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ক্যারবিয়ানরা। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলার আলজারি জোসেফ প্রথম ৩ উইকেট নিলেন। ২৭ রানের মধ্যে রিশাব পান্ত (১), আনমোলপ্রিত সিং (৩) ও কিশানকে (৪) হারালো ভারত। তাদের মেরুদণ্ডটা ভেঙ্গে গেল ওয়াশিংটন সুন্দর (৭) ও আরমান জাফর (৫) দ্রুত বিদায় নিলে। ৫০ রানে নেই ৫ উইকেট। এরপর আসরে ৬ ম্যাচে পঞ্চম ফিফটি পেলেন সরফরাজ খান (৫১)। কিন্তু রায়ান জন মাঝের তিন উইকেট নিলেন। তাতে হাচড়ে পাচড়ে ১৪৫ পর্যন্ত যেতে পারলো ভারত। পেসাররা ক্যারিবিয়ানদের পথটা করে দিলো। আর তাদের ব্যাটসম্যানরা শেষ পর্যন্ত ১১তম আসর থেকে ছিনিয়ে আনলো যুব ক্রিকেটে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।