কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে অপহরণ করে গভীর অরণ্যে অথবা উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলের প্যারাবনে আটকে রেখে নিরাপদ মুক্তিপণ আদায়ের ভয়ংকর দ্বীপ এখন মহেশখালী উপকূল। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গম মহেশখালী দ্বীপকে এ অপকর্মের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। বেপরোয় হয়ে উঠছে দ্বীপের বেশক’টি সন্ত্রাসী গ্রুপ। বিভিন্ন মামলার ফেরারি আসামিদের সমন্বয়ে গঠিত স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও পরোয়া করছে না। তারা একের পর এক অপরাধ করেই চলছে।
গত ১০/১২ দিনে মহেশখালী দ্বীপের দুর্গম উপকূলীয় দ্বীপ সোনাদিয়া ও হোয়ানকের পাহাড়ি এলাকার গহীন অরণ্যের অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে ৩ যুবকে উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই মহেশখালী অপহরণকারীদের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিণত হবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীর হোয়ানকের কালাগাজীর পাড়া এলাকার পাহাড়ি গহীন অরণ্য থেকে মহেশখালী থানা পুলিশ মোঃ রাসেল উদ্দিন (২৯) নামের এক যুবককে উদ্ধার করে। কক্সবাজার শহর থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসে আটকে রাখা হয়েছিল উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়নের নুরুল আজিজের পুত্র রাসেলকে। পুলিশ এ ঘটনায় বিকাশের মাধ্যমে আদায়কৃত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ এক বিকাশ এজেন্টকে আটক করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাসেলকে মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে অপহরণকারী চক্রের জনৈক সদস্য বেড়াতে আনার ভান করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি গহীন জঙ্গলে আটকে রাখে। এর পর অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে অপহৃতের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল চন্দ্র বণিক জানান, অপহৃতের চাচাতো ভাই হেলাল উদ্দিন অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ এজেন্টের নম্বরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার পর বিষয়টি মহেশখালী থানাকে অবহিত করে। পরে ওসি তদন্ত দিদারুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান নির্ণয় করে। ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ অভিযান চালিয়ে হোয়ানকের কালাগাজীর পাড়া এলাকার গহীন অরণ্যে আয়ুব আলী বাহিনীর আস্তানা থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাত সাড়ে ৩টায় ওই এলাকার বিকাশ এজেন্ট হরিয়ার ছড়া গ্রামের শফিকুর রহমানের পুত্র নুরুল আজিমকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, অপহরণকারীরা বিকাশ থেকে টাকা নিতে আসার আগেই অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। ফলে বিকাশে দেওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যাপারে অপহৃতের চাচাতো ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে পুলিশ মামলার স্বার্থে আসামিদের নাম জানান নি।
অপরদিকে গত ১ ফেব্রুয়ারি র্যাব–৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্প’র একটি দল মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবনে অভিযান চালিয়ে মীর আহমদের ছেলে আব্দুল মজিদ (২৪) ও তার ছোট ভাই মোঃ এমরান (১৫) নামের দু’সহোদরকে উদ্ধার করে। কক্সবাজার শহর থেকে রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের দরিয়ারদীঘি মৌলভী বাজার এলাকার এই দু’ভাইকে অপহরণ করে নিয়ে আসা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত দু’সহোদর কক্সবাজার শহরে বেড়াতে আসলে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের মোকাররম হোসেন প্রকাশ জম্বু বাহিনী তাদেরকে অপহরণ করে। পরে সোনাদিয়া দ্বীপে নিয়ে এসে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আটকে রাখে বলে জানা গেছে।