অবশেষে বহুল প্রতিক্ষীত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু হতে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলা শহরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিন পর এটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাও প্রয়োজনীয় লোকবল ছাড়াই কোন রকমের জোড়াতালি দিয়ে। আইসিইউ’র জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করেই যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল দীর্ঘ ৫ বছর আগে।
এসব যন্ত্রপাতি অযতœ অবহেলায় ঠাঁই পড়ে রয়েছে হাসপাতাল ভবনের একটি কক্ষে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে এই আইসিইউ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একজন মানুষের জীবন-মরণ সমস্যার সময় সুচিকিৎসা দেয়ার মত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সবকিছু থাকা সত্বেও কেবল লোকবলের অভাবেই এতদিন এমন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটটি চালু করা যায়নি।
এক যুগ আগেই কক্সবাজার জেলা শহরের হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে হাসপাতালের বহি:বিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশী রোগি চিকিৎসার জন্য আসে। আর হাসপাতালের ২৫০ শয্যায় প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য গড়ে ভর্ত্তি থাকে চার শতাধিক রোগি। অথচ নিয়ম অনুযায়ি শতকরা দশ ভাগ রোগির জরুরি অবস্থার জন্য সিট খালি রাখার কথা থাকলেও এখানে তাও সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের একটি কক্ষে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চালুর দাবিও দীর্ঘদিনের। এ কারনে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চালু করা হয়নি।
অথচ কক্সবাজার হচ্ছে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কারনে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন দেশ-বিদেশের অগনিত সংখ্যক পর্যটক। এমনকি ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদেরও আগমন ঘটে প্রায়শ। একারনে জেলা সদর হাসপাতালটিতে একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) গুরুত্ব অত্যধিক। আর দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শহরের সরকারি ও বেসরকারি কোন একটি চিকিৎসা কেন্দ্রেই একটি আইসিইউ নেই। এমনকি কক্সবাজারে নেই আইসিইউ এর মত বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থাও। এ কারনে অনেক মুমূর্ষু রোগি চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ার কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আইসিইউ’র অভাবেই আমার বাবাকে কক্সবাজারে চিকিৎসা করাতে পারিনি। দীর্ঘ ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েই গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে হারিয়েছি বাবাকে।’ তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলা শহরের হাসপাতালটিতে আইসিইউ কেন্দ্র চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কক্সবাজারে আইসিইউর চিকিৎসা সেবার অভাবে এরকম আরো অনেক হতভাগার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে অকালে।
কক্সবাজার জেলা সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ পুচনু (রাখাইন) জানান, আইসিইউ খোলার জন্য যন্ত্রপাতি আসার পর চিকিৎসক ও নার্স সহ ৫৬ জনের জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয় ২০১৪ সালের ১১ মার্চ। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ প্রতিনিয়তই আইসিইউর চিকিৎসা সুযোগ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গও বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, গত বছর কক্সবাজারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র সরেজমিন দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দ্দেশে সরকারের ৯ জন সচিব কক্সবাজার সফরে আসেন। এসময় সচিবদের আইসিইউর বাস্তব সমস্যার কথা জানানো হয়।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দ্দেশে গত বছরের অক্টোবরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন।এই কমিটি ফিরে গিয়েই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাঠানো হয় যে-কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বর্তমান জনবল থেকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে আইসিইউ চালু করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত পাবার পর কক্সবাজার হাসপাতালে কর্মরত ৪ জন চিকিৎসক ও ৪ জন নার্স চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে গিয়ে আইসিইউ চালু করার প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষিত এই চিকিৎসক এবং নার্স দিয়েই আগামী সপ্তাহ-দুয়েকের মধ্যে আইসিইউ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ডাঃ পুচনু জানান। তবে এখনো পর্যন্ত আইসিইউ চালুর জন্য চাহিদামাফিক জনবল পাঠানোর কোন সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়নি।
প্রসঙ্গত কক্সবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরর মঞ্জুরিকৃক পদ রয়েছে ২৪১ টি। অথচ এসব পদের অনুকুলে রয়েছেন ১৪৮ জন। অর্থাৎ আরো ৯৩ টি পদ খালি রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৪ জন।