মো. ইদ্রিসুর রহমান বনাম সৈয়দ শাহিদুর রহমান মামলার রায়ে সুপ্রিমকোর্ট বিচারকদের ৪০ দফা আচরণবিধি উল্লেখ করেছেন। রোববার সুপ্রিমকোর্টের ওয়বসাইটে ওই রায় প্রকাশ করা হয়। আচরণবিধির একটি দফায় বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার পর তাতে স্বাক্ষর করতে ব্যতিক্রমধর্মী মামলার ক্ষেত্রে ৬ মাসের বেশি সময় নেয়া যাবে না। রায় বা আদেশ দেয়াসহ তাৎক্ষণিকভাবে বিচার কাজ শেষ করার কথাও বলা হয় ওই আচরণবিধিতে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উল্লেখিত ৪০ দফা আচরণবিধির কোথাও বলা হয়নি অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না। আবার অবসরের পর রায় লিখতে পারবেন এমন কথাও উল্লেখ নেই। মূলত অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে এখানেই। তাদের মতে, বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন। এতে সবার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আচরণবিধিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় একটু অস্পষ্টতা রয়েছে। তিনি বলেন, একজন জাজ বলতে সিটিং জাজকেই বোঝায়। অবসরের পর আর তিনি জজ থাকেন না। কাজেই অবসরের পরে কেউ রায় লিখতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে অন্তত একটি লাইন এই রায়ে থাকা দরকার ছিল।
ব্যারিস্টার শফিক আরও বলেন, একজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে রায় ঘোষণা করলে তা লেখার জন্য ৬ মাস সময় পাবেন। এ কারণে অবসরের পরে রায় লেখার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু অবসরের পরে তো আর কেউ বিচারপতি থাকেন না। সেক্ষেত্রে রায় প্রদানকারী বিচারপতি অবসরের পর তা লিখতে পারবেন কিনা সেটি স্পষ্ট করা দরকার।
১৭ জানুয়ারি বর্তমান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে অবসরের পর রায় লেখাকে সংবিধানপরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের পর দীর্ঘদিন ধরে রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থী।’ এরপর বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এর কিছুদিন পরই বিচারকদের ৪০ দফা আচরণবিধি সংবলিত আপিল বিভাগের রায় প্রকাশ পেল। এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিষয়টি উল্লেখ না করেই ছয় মাসের মধ্যে রায় লেখা শেষ করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন বিচারপতি অবসরের পরেও রায় লেখার সুযোগ থাকে। এটা প্রধান বিচারপতির দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এখানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা কোনো রায় লিখবেন না- এমন বিধান থাকা উচিত ছিল। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ এখনও বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। রুলস সংশোধনের মাধ্যমে অথবা রায়টি পুনির্বিবেচনার মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।