1. arif.arman@gmail.com : Daily Coxsbazar : Daily Coxsbazar
  2. dailycoxsbazar@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  3. litonsaikat@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  4. shakil.cox@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  5. info@dailycoxsbazar.com : ডেইলি কক্সবাজার : Daily ডেইলি কক্সবাজার
অরক্ষিত উপকূল : ভয়াল ২৯ এপ্রিল - Daily Cox's Bazar News
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ ::
ডেইলি কক্সবাজারে আপনার স্বাগতম। প্রতি মূহুর্তের খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
সংবাদ শিরোনাম ::
কট্টরপন্থী ইসলামী দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ: এসএডিএফ কক্সবাজারের আট তরুণ তরুণীকে ‘অদম্য তারূণ্য’ সম্মাননা জানাবে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি Job opportunity বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না, নাকি স্বপ্নের দেশ! আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের আহ্বান আরব লীগের পেকুয়ায় পুলিশের অভিযানে ৮০ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার-১ পেকুয়ায় অস্ত্র নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল : অস্ত্রসহ আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন টেকনাফে একটি পোপা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা ! কক্সবাজারের টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-১ নিউ ইয়র্কে মেয়র কার্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে কনসাল জেনারেলের আলোচনা

অরক্ষিত উপকূল : ভয়াল ২৯ এপ্রিল

ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬
  • ২৮০ বার পড়া হয়েছে

13061996_1590964081215166_8217877384571014599_n‘২৬ এপ্রিল থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। বাড়িতে স্ত্রী, বড় সন্তান ও বৃদ্ধা মা অসুস্থ। কাঁচা রাস্তা হওয়ায় তাদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়াও দুরূহ হয়ে পড়ে। দারিদ্রতার কারণে ডাক্তারকে বাড়ি আনাও সম্ভব হচ্ছিল না। অপেক্ষায় ছিলাম বৃষ্টিটা থামলে তিনজনকেই চিকিৎসকের কাছে নেয়ার। ২৯ এপ্রিলের জলোচ্ছাস বৃষ্টি থামিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আমার অসুস্থ স্বজনদের ডাক্তারের কাছে নেয়ার সুযোগ আমাকে দেয়নি। প্রায় ২০ ফিট উঁচুই বয়ে যাওয়া জলোচ্ছাস তাদের সবার হৃদয় স্পন্দনও থামিয়ে দেয়। তাদের লাশটি পর্যন্ত আর দেখা হয়নি। ২৫ বছরে এলাকায় অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আবাস গেড়েছি এরপরও হারানো ধনদের স্মৃতি আমাকে পিছু ছাড়েনা কখনো। আজ তাদের কথা বেশি মনে পড়ছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ টেকপাড়ায় নিজ বাড়িতে বসে ভয়াল ২৯ এপ্রিলের রাতে স্বজন হারানোর সেই স্মৃতি বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার আবেগ আফ্লুত হয়ে যান জহির আহমদ (৫৭)। তিনি সে দিন মা-সন্তান ও স্ত্রীসহ ও নিজ ঘর বাড়ি হারিয়েছিলেন।

শুধু তিনি নন, উপকূলের শত শত মানুষ তার মতো আপনজনকে হারিয়ে এখনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। দু’যুগ সময় পিছনে ফেলে এসেছেন তারা। কিন্তু হারানোর বেদনা তাদের কখনো নিস্তার দেয় না। উপকুলবাসীর স্বজন হারানোর সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। এদিনে ভারাক্রান্ত মনে উপকূলবাসি তাদের হারানো স্বজনদের স্মরণ করবে। কেউ মিলাদ পড়িয়ে, কেউ ছিন্নমূলদের মাঝে খাবার বিতরণ করে কিংবা বিলাপে শান্তনা খোঁজার চেষ্টা চালাবেন তাঁরা।

জানাযায়, ১৯৯১ সালের এই দিনে স্মরণকালের সেই ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস চট্টগ্রাম কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকা তছনছ করে এক মহা ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছিল। রাতের অন্ধকারে মুর্হুতের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকা। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই রুদ্ধরোষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি উপকুলের মানুষ আর কখনো হয়নি। তাই ২৯ এপ্রিল আসলে স্বজন হারা মানুষের কান্নায় এখনও ভারি হয় উপকূলের আকাশ বাতাস। সেই জলোচ্ছাসের কবলে পড়া উপকূলবাসীকে স্বজন হারানোর বেদনা আজও অশ্রু ভারাক্রান্ত করে তুলে।

13094345_1590964137881827_6792265550168310172_nক্ষতিগ্রস্তদের মতে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল আবহাওয়া বিভাগ উপকূলীয় এলাকায় ৯নং সতর্কতা সংকেত জারি করলেও অজ্ঞতার বশে লোকজন অন্যত্র সরে না যাওয়ায় মহা দূর্যোগের শিকার হন। রাত ১০টার পর ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় সাগরের পানি মুর্হুতেই ধেয়ে এসে লোকালয়ে প্রবেশ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলায় ওই রাতে অনেক মা হারায় সন্তানকে, স্বামী হারায় স্ত্রীকে, ভাই হারায় বোনকে। অনেক পরিবার আছে যাদের গোটা পরিবারই পানির স্রোতে হারিয়ে গেছে। ২৯ এপ্রিলের সে ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনও কেঁদে বেড়ায় স্বজন হারানো উপকুলবাসী।

ভয়াল এই ঘুর্ণিঝড়ে উপকুলীয় ১৯ জেলার ১০২ থানা ও ৯টি পৌরসভায় সরকারী হিসাব মতে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন নিহত, ১২ হাজার ১২৫ জন নিখোঁজ, ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪ জন আহত হয়। মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা, বৈদ্যুতিক খুটি, গাছ-পালা, চিংড়ি ঘের, স্কুল-মাদ্রাসা, পানের বরজ, লাখ লাখ গবাদি পশু, ব্রীজ কালভার্ট ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষতি সাধিত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার। তাই ২৫ বছর পরও অতীতের স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলতে পারেনি উপকুলবাসী।

প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল এলেই ঘরে ঘরে মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, দোয়া কামনা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, আলোচনাসভা, র‌্যালী বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়। কিন্তু এখনও অরক্ষিত দেশের বিস্তীর্ণ উপকুলীয় এলাকা এবং এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। ভয়াল ২৯ এপ্রিলের পর থেকে এখন উপকুলবাসী ঘুর্ণিঝড়ের আগাম সংকেত পেলেই দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।

তথ্যানুসন্ধানে  জানা গেছে, ১৫৬১  সালের জ্বলোচ্ছ্বাসেও উপকূলের বিপুল মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ১৭৬২ সালে, ১৭৯৫ সালের ৩ জুন,  ১৮৯৭  সালের ২৪ অক্টোবরে,  ১৯০৫ সালের ২৯ এপ্রিলে, ১৯৬৩ সালের ২৭ মে, ১৯৭২ সালের অক্টোবরে, ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে, ১৯৬৫ সালের ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়াদ্বীপসহ উপকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সর্বশেষ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের  ভয়াবহ জ্বলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া খুদিয়ার টেক নামক একটি এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।

১৯৯১ সালের এ দিনে সব চেয়ে বেশী প্রাণহানী ঘটে কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপ-দ্বীপ ধলঘাটা-মাতারবাড়ি, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন, কুতুবদিয়ার প্রায় পুরো উপজেলা এবং সদরের বৃহত্তর গোমাতলী এলাকায়। ওখানে অধিকাংশ বাড়ী থেকে পরিবারের ৫/৬ জন লোক মারাযান। অনেক যৌথ পরিবারে একসাথে ৪০জনও মারা গেছে এমন পরিবারও রয়েছে। তাই এই দিনটিতে প্রতি বছর ওইসব স্মৃতি মনে করে এখনও স্বজন হারানোর বেদনায় প্রত্যেক বাড়ীতে কান্নার রোল পড়ে।

১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটা ইউনিয়নের সরইতলা এলাকার ২ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ খোলা থাকায় সাগরের জোঁয়ার-ভাটার পানি ঢুকছে। মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়ার এলাকার কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাগরে বিলিন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী থেকে গোমাতলীর রাজঘাট এলাকা হয়ে ইসলামপুর সীমানা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এমন চিত্র জেলার অন্য উপকুলীয় এলাকারও। তাই উপকূলবাসীর দাবী ঠেকসই বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূলকে সাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূূত্রমতে, জেলার বিভিন্ন উপকূলে স্থাপিত ৫৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে রয়েছে ৫১৬ টি। এর মাঝে ৪১টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই।

কিন্তু উপকূলীয় এলাকার অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, বর্তমান থাকা সাইক্লোন সেল্টারের মাঝে প্রায় ১৬০টি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট কেন্দ্রের মধ্যে অবৈধ দখলে চলে গেছে শতাধিক কেন্দ্র। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। উপকূলের লোকসংখ্যা অনুসারে সাইক্লোন সেল্টার পর্যাপ্ত নয়।

coxsbazar-29-aprilজেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ১২ জুন জেলার ব্যবহারের অনুপযোগী ১৫৪টি কেন্দ্র দ্রুত সংস্কার এবং জেলায় নতুন করে আরও ২৭৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছিল। এরই ভিত্তিতে ২০০৮-২০০৯ অর্থসনে ২১২টি নতুন সাইক্লোন সেল্টার নিমার্ণের প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোড় হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মূখ দেখেনি। তবে সরকারি অর্থায়নে ইতোমধ্যে আট উপজেলায় ১২টি নতুন সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণাধিন রয়েছে। কিন্তু সংস্কার বিষয়ে নতুন কোন বরাদ্দ কিংবা নির্দেশনা আসেনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) ড. অনুপম সাহা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা এবং নতুন করে আরও কেন্দ্র স্থাপনের জন্যও উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

শুধু সাইক্লোন সেল্টার নয়, জেলার উপকুলের ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে মহেশখালী, পেকুয়া, সদর উপজেলা এবং টেকনাফ‘র বেশ কয়েকটি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছিল। ওই ভাঙা বাঁধ এখনো পরিপূর্ণ মেরামত হয়নি। ফলে উপকুলের লাখো মানুষ এখনো ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন।  কোন সংকেত দেখা দিলে বা আবহাওয়া বার্তা শুনলে তারা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, খোদা আবার যেন ভয়াল  ১৯৯১  সালের ২৯ এপ্রিল তাদের মাঝে উপস্থিত না করায়। তাদের আর যেন স্বজনদের লাশ খোঁজতে না হয়। উপকূলবাসী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করে উপকূলের মানুষকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার।

এদিকে দিবসটি যথাযথ ভাবে পালনের লক্ষ্যে দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ২৯ এপ্রিল’১৯৯১ স্মৃতি পরিষদ, কুতুবদিয়া ফাউন্ডেশনসহ নানা সংগঠন। সকালে শোক র‌্যালী, মিলাদ ও নিহত এবং নিখোঁজদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং দরিদ্রদের মাঝে বিশেষ খাবার বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠন সূত্র।

কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কক্সবাজারের উপকুলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ সংস্কারে হাত দেয়া হতে পারে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2020 Dailycoxsbazar
Theme Customized BY Media Text Communications