২৬ বছর আগে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে নেমে আসে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। সর্বনাশা ওই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চলের মানবসভ্যতা। এদিন মৃত্যু ঘটে নানা বয়সের হাজারো মানুষের। সেই সাথে ব্যাপক ক্ষতিসাধন ঘটে গৃহপালিত পশু, মৎস্য, সহায়-সম্পদসহ নানা খাতে। সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় জনগণের অন্যতম রক্ষাকবচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ।
ঘূর্ণিঝড়ের সেই তাণ্ডবের ক্ষত ইতোমধ্যে ২৫ বছর সময় অতিক্রম করেছে। কিন’ উপকূলের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন জনসাধারণ এখনো নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
এ অবস’ার কারণে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার সামাজিক নিরাপত্তা এখনো রয়ে গেছে চরম হুমকির মুখে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধসমূহ বছরের পর বছর অরক্ষিত থাকার কারণে এখনো নিশ্চিত হয়নি সামাজিক নিরাপত্তা। বছর ঘুরে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের আতংক জনগণের সামনে উপসি’ত হলেও এতদিনেও ভাগ্যবদল ঘটেনি এতদঞ্চলের আমজনতার। পরিবর্তন আসেনি ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের ।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম উৎস হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টার। ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের পর গেল ২৫ বছরে দুই উপজেলায় অদ্যাবধি নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। এ ভয়ংকর বাস্তবতাকে সংগে নিয়ে দুই উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ এখনো ঘূর্ণিঝড় আতংকে রয়েছে।
উপকূলীয় জনপদে এখনো বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান। তিনি বলেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২১টি পোল্ডারের অধীন জেলার আট উপজেলায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক এলাকায় উঁচু বেড়িবাঁধ মিশে গেছে মাটির সাথে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর অধিক ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রাপ্ত অর্থ বরাদ্দের বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারে কাজ করছে। অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছর চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের লম্বাখালী ঘোনা এলাকায় তিনটি প্যাকেজে ১১ কিলোমিটার ও অপর একটি পোল্ডারে ১৭ কিলোমিটারসহ উপকূলের বিপুল এলাকায় নতুন করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে ১৮ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তার মধ্যে চকরিয়া উপজেলার তিনটি পোল্ডারের অধীন কোনাখালী ইউনিয়নের কাইজ্জারদিয়া, বিএমচর ইউনিয়নের কন্যারকুমসহ ৪ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস’ায় রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে যাতে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ ১৮ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা যায় সেই জন্য আজকালের মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পাউবোর উর্ধ্বতন প্রশাসনে পরিপত্র পাঠানো হবে। বরাদ্দ নিশ্চিত হলে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধসমূহের মেরামত কাজ সহসা শুরু করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, সাইক্লোন শেল্টারের চেয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার মূল বলয় হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ও উপকূলীয় বনবিভাগের সৃজিত প্যারাবান। কিন’ সরকারের উর্ধ্বতন মহলের চরম উদাসীনতা এবং পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দের অভাবে সংস্কার কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এখনো উপকূলীয় অঞ্চলে অরক্ষিত রয়েছে জনগণের অন্যতম রক্ষাকবচ বিপুল আয়তনের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ। তিনি বলেন, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অধিক ঝুঁকিপুর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সহসা সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে জনগণের মাঝে আতংকের মাত্রা আরও বাড়বে।