রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে আজ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে চারটি এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বেসরকারি উদ্যোগে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো। কিন্তু আমরা দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। এ কাজে স্থানীয় জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী এসব শিল্প স্থাপনে জমি দিয়ে সহযোগিতা প্রদানকারী স্থানীয় জনগণকে শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ দেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, জি টু জি, পিপিপিসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বেসরকারি উদ্যোগে পিপিপির আওতায় নির্মাণাধীন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরের ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটসংলগ্ন ‘মেঘনা ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার এবং একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণাধীন ‘মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, ‘মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’, কক্সবাজার এলাকার ‘সাবরাং টুরিজম পার্ক’ ও মৌলভীবাজারে ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন।
বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন শিল্প এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নদী পরিবেশ যাতে দূষণ না হয়, সে লক্ষ্যেই শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারের এসব উদ্যোগ।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘একটা সময় সরকারি বিটিভি ছাড়া বেসরকারি খাতে কোনো টেলিভিশন ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চালানোর সুযোগ দেয়। একটি মাত্র মোবাইল কোম্পানি ছিল, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিল মোবাইল সেটের দাম, কল করলেও মিনিটে ১০ টাকা ধরলেও মিনিটে ১০ টাকা খরচ হতো। সেখান থেকে আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে।’ বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়াই এর মূল কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে সরকারি, বেসরকারি ও কো-অপারেটিভ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন, সরকার এখন সে পথ অনুসরণ করেই এগোচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মীরসরাই অঞ্চল থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সাংসদ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।