আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ বাস্তবায়নে একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্র জোর তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের অনৈতিক কাজে সহযোগীতা করতে ওই চক্রটি খোদ জেলা প্রশাসককেও বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে কাটতে চার একর অক্ষত বিশালাকৃতির পাহাড়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়। বিউবোর কক্সবাজার বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শহরের কলাতলী এলাকার ঝিলংজা মৌজার ১৭০৩০ নং দাগের চার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে উল্লেখ করা হয়, জমিটি পাহাড় শ্রেণীর। এর পর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। পরে বিষয়টি প্রচার হলে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা ) পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন বেলা প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওই মামলার প্রেক্ষিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর কলাতলী এলাকায় পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণসহ জমি অধিগ্রহণের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশদেন আদালত। একই সাথে এর আশপাশের এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই এলাকা কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবেনা এবং এ এলাকায় পাহাড়গুলো সংরক্ষণ করতে ব্যর্থতাকে কেন দায়ী করা হবেনা তা জানতে চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে আদালত। সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারক একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুপ্রীম কোর্ট ও বেলার আইনজীবি মিনহাজুল হক চৌধুরী।
পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, জমিটি একটি বিশাল অক্ষত পাহাড়। যার কোনো মাটি কাটা হয়নি বা কোনো অংশ ধসে পড়েনি। পাহাড়টিতে এখনো জীববৈচিত্র সংরক্ষিত আছে। সরকারিভাবে আবাসন প্রকল্পের জন্য পাহাড়টি বন্দোবস্ত দেয়া হলে একদিকে পাহাড়ে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, অন্যদিকে পাহাড় কাটতে ব্যক্তিপর্যায়ে অন্যরা উৎসাহিত হবে।
সুত্র জানায়, পাহাড়ি জমি আবাসনের জন্য বন্দোবস্ত না দিতে গত ২০ এপ্রিল পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ূথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়, ওই চার একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল। পরে তা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এখন সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র ক্ষতিপূরণের নামে সরকারের ৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে গোপনে পাহাড়ি জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ করেছে।