মহান ভাষা আন্দোলনের অমস্নান, অজেয় স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারির ১৯তম দিবস আজ শুক্রবার। দিকে দিকে এখন চলছে অমর একুশে উদযাপনের প্রস্তুতি। বনে বনে ফাগ্লুগুনের রং লেগেছে, চলছে রক্তিম উৎসব। বসন্ত যেমন প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু, ফেব্রুয়ারি তেমনি নতুন দীক্ষা নেয়ার মাস। কোকিলের কুহুতান, পলাশ-শিমুলের রক্তলাল পুষ্পডালি যেমন পুরনো মনে হয় না, ফেব্রুয়ারির আবেদনও তেমনি কখনো ফুরিয়ে যায় না। তাই তো ভাষার মাসটি এলেই জেগে ওঠে প্রাণ।
ফেব্রুয়ারি কেবল রোমান দেবতা ‘ফেব্রুস’-এর নামানুসারে রাখা ইংরেজি বছরের একটি মাত্র মাস নয়, গোটা দুনিয়ার তাবৎ মানুষের মধ্যে ভাষাপ্রেমের বীজমন্ত্র গ্রথিত হওয়ার মৌসুমও বটে।
‘যেসবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি- মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিমের কাব্য গাঁথা মাতৃভাষাবিরোধী জন্ম নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি করে। যদিও সেই হাজার বছরের চর্যাপদ, মনসামঙ্গল, গীতগোবিন্দ, মৈমনসিংহ গীতিকা, পুঁথি সাহিত্য, গজল, বাউল গান, আলাওল, চন্ডীদাস, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ এবং সমকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদের প্রবহমান এবং শাশ্বত ঐতিহ্যের ধারায় আমরা অবগাহন করেছি বংশানুক্রমে।
ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা ষোলআনা বাংলাভাষী সাজার চেষ্টা করি। এ কথা সত্য যে, ভাষা আন্দোলন তথা একুশের চেতনায় অনেকেই চলনে-বলনে বাংলাভাষী হতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। একই কারণে মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগেও মোবাইল টেলিকম অপারেটররা বাংলা ভাষায় রিংটন, এসএমএস, স্ক্রিন ডিসপ্লে চালু করেছে।
বিগত ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৮ জন এবং সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২ জন ছাত্রের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের কল্যাণে রবি’র গ্রাহকরা সর্বপ্রথম বাংলায় এসএমএস (শর্ট ম্যাসেজ) করার সুযোগ লাভ করে। এখন তো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল সেটেই বাংলা সফটওয়্যার সংযোজিত হয়েছে। এসব সফটওয়্যার উদ্ভাবনকারীরা যথার্থ মূল্যবোধক গুরুত্ব দিয়ে কেবল বাংলা ভাষাকেই উচ্চকিত করেননি, নিজেরাও কীর্তিমান হয়ে থাকবেন।