আইন প্রয়োগে প্রশাসনের দুর্বলতা , পরিবেশবাদী ও এনজিও সংস্থার লোক দেখানো তামাক বিরোধী র্যালী ও সভা-সমাবেশে দায়সারা মনোভাব । তামাক কোম্পানি ও দাদন ব্যবসায়ীদের মদদ পুষ্ঠে আলীকদম উপজেলায় আপেক্ষিক হারে তামাক চাষ বেড়েই চলছে। জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই তামাক চাষের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছে পার্বত্য আলীকদম উপজেলাবাসি। ক্রমান্বয়হারে এলাকায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। এতে করে গরীব তামাক চাষীদেরকে দাদন ব্যাবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে অক্টোপাশের মত ঋনের জালে আবদ্ধ করে রাখছে।
সরজমিনে দেখা যায়, পার্বত্য বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার মাতামহুরী নদীর দু,ধারের উব্রর খাস জমি ও উপজেলার নয়া পাড়া, বাবু পাড়া, আমতলী, ভরীর মূখ, দরদরী, রেপার পাড়া, কলার ঝিরি, শিবাতলী পাড়া, তৈনখাল, দু‘চরি খাল ও পানবাজার প্রভৃতি এলাকার আমন-আঊশও বহু প্রজাতীর শাক সব্জি ফলন উপযোগি কৃষি জমি গুলিতে চলতি মৌসুমে তামাক চাষে ভরে গেছে। সম্প্রতি ধান কাঠার সাথে সাথেই এই এলাকার কৃষকরা বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে সামান্য আর্থিক ও তামাক চাষ সহায়ক কৃষি সামগ্রী নিয়ে চাষ আরম্ভ করে দেয়। তামাক চাষের জন্য কৃষি বিভাগ এবং সরকারী ঋণ প্রয়োগকারী ব্যাংক গুলির আর্থিক সহার্য্য না পাওযায় কোম্পানী গুলির সহায়তায় তামাক চাষিরা বেশি দুর এগোতে পারেনা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও তামাক চাষীরা এলাকার চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ছড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। দাদন ব্যাবসায়ীরা এই মোক্কম সময়ের সদব্যবহার করে তাদের ইচ্ছে মত সুদ নির্ধারন করে কৃষকদের উপর মোটা অংকের ঋনের বোঝা চাপিয়ে দেয়। সহজ-সরল তামাক চাষীরা এই ঋণ নিতে গিয়ে চেক, খালী স্টাম্প, ভিটেঘর বন্ধক দিতে হয় । এ ছাড়াও অলিখিত স্টাম্পে একজন দাদন ব্যবসায়ীর সহযোগি ভুমিকায় আরও ৪ জন দাদন ব্যবসায়ী সাক্ষি হিসেবে থাকে। একদিকে কতিপয় তামাক কোম্পানি গুলোর প্রলোভনে পড়ে আর পিছনের দিকে যেতে পারছেনা তামাক চাষীরা। অপর দিকে সামান্য পুজি নিয়ে চাষ আরম্ভ করে বেশি দুর এগোতে না পেরে বাধ্য হয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হযে যাচ্ছে কৃষকরা।
আইন প্রয়োগে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে পরিবেশবাদীদের তামাক চাষ বিরোধী র্যালী ও সভা সমাবেশ, সিম্পোজিয়াম ও বিভিন্ন এনজিওর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, নিরাপদ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে গেলেও তা কোন কাজে আসছেনা !!!। উপজেলার মাতামহুরী ও তৈনখালের দু‘পাশের উরব্র জমি গুলিতে কালো তামাক চাষের মরণ থাবা থেকে এলাকাবাসি রক্ষা পাচ্ছেনা। আলীকদম উপজেলা একটি সম্ভাবনাময়ী কৃষি অঞ্চল। অথচ তামাক কোম্পানি গুলোর সহায়তায় উপজেলার রবিশষ্যের জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। তামাক চাষের কারণে এতদাঞ্চলের খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি এখানকার মাটি, পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র ও প্রাণ সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। তামাক চাষের কারণে এখানকার জীবন-জীবিকা ও সভ্যতা সৃষ্ঠির অন্যতম উৎস খরস্রোতা মাতামহুরী ও তৈল খাল ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তামাক চাষে বিষ প্রয়োগের কারণে মৎস সম্পদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এবং গবাধি পশুর চারণভুমি নেই বল্লে চলে। এ ছাড়াও প্রতি বছর তামাক শোধনের কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার হওয়ায় প্রতিনিয়তে উজাড় হচ্ছে মাতামহুরী রিজার্ভ বন বিভাগের সংরক্ষিত ও রিজার্ভ এবং সামাজিক বনায়নের মুল্যবান বৃক্ষ। এতে করে চাষীদের স্বাস্থ্যহানি ও ঘটছে। এই মরণ তামাক চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা তামাক চাষের অনুকুলে ঋণ প্রয়োগকারী কোম্পানী ও দাদন ব্যবসায়ীর ঋণের জালে বন্ধি হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর ঋনের গানী টানতে না পেরে তামাক মওসুমে বিষ পানে আত্মহত্যার প্রবণতা ও দেধা গেছে। আবার অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে।
এলাকার বিজ্ঞমহল ও পরিবেশবাদীরা তামাক চাষ রোধ করে বিপুল সম্ভাবনাময়ী পার্বত্য আলীকদম উপজেলার কৃষি জমি , সরকারি সংরক্ষিত বনভূমি, সরকারী খাস জমি , মাতামহুরী নদী ও তৈল খালের তীরবর্তী ও উপজেলাস্থ উব্রর জমিগুলোকে ফসল ও রবিশস্যের আওতায় আনার জন্য সংশিষ্ঠ প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোকে জোরালোভাবে আইন প্রয়োগ ও প্রতিকারে প্রদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান, আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমদ।