আ’লীগের গলার কাঁটা এমপি বদি টেকনাফের ৫ ইউনিয়নে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬
৪১৪
বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের গলায় কাঁটায় পরিণত হয়েছেন দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। অঘটন ঘটন পটিয়সি এমপি বদি এবার টেকনাফ ৬ ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের জয়ের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সবক’টি ইউপি’র বিদ্রোহী প্রার্থীরাই তার আশীর্বাদপুষ্ট বলে মাঠে খবর রটেছে। নিজ পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে নানা তালবাহনা শুরু করেছেন ওই এমপি বলে অভিযোগ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ফলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিতর্কিত ওই এমপি। এমনকি একটি ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও তাঁর নিরব সমর্থন নিয়ে চলছে জোর গুঞ্জন। এসব নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে এবার এমপি বদির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগও এমপি বদিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।
চলমান ইউপি নির্বাচনে সীমান্তের বহুল আলোচিত এমপি আবদুর রহমান বদির ভুমিকা নিয়ে এখন ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। হোয়াইক্যং ইউপিতে জামায়াত প্রার্থী নূর আহমদ আনোয়ারীর প্রতি তার নীরব সমর্থন। এছাড়া হ্নীলা ব্যতিত অন্য ৪টি ইউপিতে তার মদদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থানের ফলে ভোটের অংকে জটিলতা বেড়েছে। এ নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা। বির্তকিত ওই এমপি এমনকি বৃহস্পতিবার টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নে দলীয় দু’টি পৃথক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া থেকেও বিরত থাকেন। টেকনাফের সাবরাং এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সংবর্ধনা সভা যথারীতি অনুষ্ঠিত হলেও এমপি বদি কৌশলে এসবে যোগ দেননি। এ প্রসঙ্গে এমপি বদি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তাঁকে সাবরাং ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি নুর হোসেনের সমর্থকরা ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের’ দাবিতে সড়কে অবরুদ্ধ করে রাখায় তিনি কয়েক ঘণ্টা যাবত কোথাও যেতে পারেননি।
এ বিষয়ে সাবরাং ইউপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সোনা আলী জানান, এমপি বদির আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। এমনকি এমপি বদি দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে তার ফোন পর্যন্ত করেননি। উল্টো তার পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে গোপনে টাকা খরচ করছেন।
আর সেন্টমার্টিন ইউপি আ’লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত এমপি বদির সাথে তার কোন যোগযোগ হয়নি। তিনি কয়েকবার ফোন করেও তাকে পাননি। অথচ তাঁর অনুসারীরা দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী বিভিন্ন জনসভায় নিজেকে এমপি বদির প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা দিচ্ছেন।
এদিকে নানা কারণে ফুসে উঠে জেলা ছাত্রলীগ। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এমপি বদিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। ওখানে তাকে হাইব্রীড নেতা হিসেবেও উল্লেখ করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে জেলা ছাত্রলীগ বলেছে-এমপি বদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি হলেও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোন অনুষ্ঠানেই তাঁকে পাওয়া যায়না। এমনকি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১৪ মাসে একবারের জন্য এমপি বদিকে পাওয়া গিয়েছিল। জেলা ছাত্রলীগের এরকম ফেইসবুক ষ্ট্যাটাসে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ জানান-‘এমপি বদিকে ‘হাইব্রীড’ আওয়ামী লীগার হিসেবে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে আমার দেয়া ষ্ট্যাটাসে শত শত ফেইসবুক ইউজার লাইক এবং নানা মন্তব্য দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় জানান, ‘এমপি বদি দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নতো করেনইনা বরং উল্টো তাদের বিরুদ্ধে নামেন। এমনকি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েই তিনি ‘হাইব্রীড আওয়ামী লীগার’ হিসাবে প্রমাণ দিয়েছেন।’
অপরদিকে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানান, বৃহস্পতিবার জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দকে দলীয় সংবর্ধনায় স্ব স্ব ইউনিয়নের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। এমপি বদি দলীয় মনোনীত এসব প্রার্থীদের সমর্থন না দেয়ায় তিনি বাস্তবে ‘অবরুদ্ধ নাটক’ সাজিয়ে সংবর্ধনা সভায় যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, যদি টেকনাফ সীমান্তের ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজয় ঘটে তাহলে সেজন্য দলীয় এমপি আবদুর রহমান বদির কর্মকান্ডকেই দায়ী করা হবে।
এসব বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দলীয় সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন-‘টেকনাফ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে এমপি বদি কেবল হ্নীলাতেই দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। অপর ৪ টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী এবং হোয়াইক্যংয়ে জামায়াত প্রার্থীকে নিরব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।’ সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরো অভিযোগ করে বলেন, এমপি বদি যেসব বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিরব সমর্থন দিচ্ছেন তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীও রয়েছেন।
প্রসঙ্গতঃ এমপি আবদুর রহমান বদি সম্প্রতি কক্সবাজারের রামুতে সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগদান না করাকে কেন্দ্র করেও আলোচনায় উঠে আসেন। সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের ২টি ব্রিগেডসহ ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি ছিল গত ১০ মার্চ। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের অন্যান্য সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত থাকলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে অনেক আলোচনার জন্ম দেয়। এমনকি সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠান পরবর্তী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন এমপি বদি।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান-‘আসলে এমপি বদি বিলম্বে হলেও হয়তোবা বুঝতে পেরেছেন আগামীতে আওয়ামী রাজনীতিতে তাঁর দিন শেষ হয়ে আসছে। তাই তিনি আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকেই স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংশ করার কাজে নেমে পড়েছেন।
তবে এসব বিষয়ে সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।