সরকারের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমরা ভিনদেশী না, বাংলাদেশের মানুষ। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের দাবি, অবিলম্বে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।’
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে ৫ জানুয়ারী নির্বাচন সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারী কোনো নির্বাচন হয় নাই। তাদের সেই নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে গেল।’
‘আপনারা কি শুনেছেন, ভোট ছাড়া নির্বাচিত হলে তারা জনগণের কী প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাকিগুলোতে পাঁচ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। সেদিন আপনারা সবাই দেখেছেন, ভোট কেন্দ্রে কোনো মানুষই ছিলো না শুধু প্রিজাইটিং অফিসার ছাড়া। তারা সেখানে গিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। যেহেতু মানুষ নাই; তাই সেই ভোট কেন্দ্রে কুকুর পাহারা দিয়েছে। আর ভোট দিয়েছে সেই কুকুরাই।’
৫ জানুযারীকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সেদিন তারা একদলীয় শাসন কায়েম করে তাদের লোকজনকে নিয়ে নির্বাচন করেছে। তাই আজকের দিনটি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।’
এর আগে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে কিভাবে ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছিলো সে নির্বাচন ছিলো পাতানো। মঈন উদ্দিন, ফখরুদ্দীনদের নির্বাচন ছিলো পাতানো। আজ তারা সেই পাতানো নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংবিধান পরিবর্তন করছে নিজেদের রক্ষার জন্য।’
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনকে অসাংবিধানিক ও অর্থব উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনর কথা বলেছিলাম। কিন্ত নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন করেন নাই। এই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করতে পারায় তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। এই নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’
পৌর নির্বাচনকে সরকারের জনপ্রিয়তা মাপার নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার পৌর নির্বাচনে নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখানোর জন্য দলীয় প্রতীকে ভোট দিলো। জনপ্রিয়তা মাপতে গেলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর যে হত্যা নির্যাতন করা হচ্ছে এসব বন্ধ করেন। এই খুন গুম করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই; আপনারাও পারবেন না।’
‘তাই আমি বলবো আমাদের বহু নেতা-কর্মী জেলখানায় আছে তাদের ছেড়ে দিন।’
সরকারের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মানুষের উপর জুলুম নয়, খুন গুম করে নয়, সঠিক পথে আসুন। জনগণের উপর এভাবে অত্যাচার করবেন না। তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। ভালো হয়ে যান।’
‘খুন গুম করে মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না; কথায় কথায় আইন করে মানুষ আটকানো বন্ধ করুন।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এরা তো আপনাদেরই ভাই, তাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করেন। জানি আপনারা দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু আপনারা ভুল দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা সবাই একসাথে মিলে মিশে থাকতে চাই। আপনারা নিশ্চিত থাকেন; আমরা ক্ষমতায় গেলে এ জন্য কোনো শাস্তি বা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আমরা আপনাদের ক্ষমা করে দেবো।’
দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সর্ম্পকে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে; সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। এই সম্পদের যদি সঠিক ব্যবহার হয় তবে দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না।’
বাংলাদেশের কৃষকরা ভালো নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায় না। কৃষি যন্ত্রপাতির দাম বাড়ে। কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করে। কৃষকদের ন্যায্য ধানের দাম দিতে হবে।’
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের নাম করে হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়েছে। তারা ব্যাংক ধংস করেছে, মার্কেট ধংস করেছে, তাহলে কী তাদের বলবো যে, তারা দেশপ্রেমিক?’
তেলের দাম বিশ্ব বাজারে কমলেও বাংলাদেশে কমছে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ‘এই তেলের দাম কেন কমছে না; সেটা সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন? কারণ তেলের দামের সাথেই অর্থনীতির সবকিছু জড়িত।’
‘আমি মনেকরি অবিলম্বে বিদ্যুৎ-গ্যাস ও তেলের দাম কমানো উচিত। সরকার লুটপাট করে ব্যাংকের পকেট খালি করেছিলো এখন জনগণের পকেট খালি করছে।’
বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের এতো দিন পর শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।’
সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ উপলক্ষে চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।