ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তিনটি স্থানে মনোনয়নপত্র জমা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগের খবরে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি দ্বিতীয় ধাপ থেকেই প্রার্থীরা এ সুযোগ পেতে যাচ্ছেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দানের সুযোগ দিতে কমিশনাররা ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে সোমবারই (২৯ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। আর এটা হলে দ্বিতীয় ধাপে যেসব ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে, সেসব ইউপির প্রার্থীরা তাদের সুবিধামত যে কোনও স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে চাইলে একজন প্রার্থী একাধিক স্থানে মনোনয়ন দেওয়ারও সুযোগ পাবেন।
কমিশনের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের বাইরে আরও দুটি স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ রাখার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার অন্তর্গত যে কোনও ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীরা নিজ নিজ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।
এদিকে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধার খবরের পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে একজন কমিশনার একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ওই বৈঠকে কমিশন বিষয়টি আমলে না নিলেও এখন নতুন করে বিষয়টি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্তটি নিতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কমিশনার শাহ নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের বাধার খবর আমাদের কাছে এসেছে। এ কারণে একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হচ্ছে।’
কয়টি স্থানে মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ রাখা হতে পারে, জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের বাইরে আরও অন্তত দুটি স্থানে এ সুযোগ রাখা হবে।’ তবে এগুলো জেলা পর্যায়ে হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে দুপুরে সাংবাদিকদের দেওয়া ব্রিফিংয়ে শাহ নেওয়াজ একই ধরনের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না নির্বাচন নিয়ে কোনও ধরনের অভিযোগ আসুক। কিছু কিছু জায়গা থেকে মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারার অভিযোগ এসেছে। আর তাই প্রত্যেক দলীয় প্রার্থীরা যেন বিনা বাধায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, এ লক্ষ্যে আমরা একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র দাখিলের একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হলেই চূড়ান্ত হবে বিকল্প স্থানগুলো কোথায়। আপাতত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে।’
বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ দেননি। তাদের ঢালাও অভিযোগে তদন্ত করা কষ্টকর। এরপরও আমরা কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত করেছি।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন একটি বিরাট নির্বাচন। সবার সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাবেন। এজন্য যা যা করা দরকার করবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আমরা কঠোর নির্দেশনা দিয়ে দেবো। প্রত্যেকে যেন নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, কোনও সংর্ঘষ হয় না। এরপরও আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলেছি। আপতত একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নির্বাচনের সময় এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আমাদের পর্যবেক্ষণে অনিয়মের কোনও চিত্র পাওয়া যায়নি।’