ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার বিরোধী বিএনপি উভয় দলের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে এই স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে উভয় দলে চলছে জোর প্রস্তুতি। বিএনপি প্রথমে ইউপি নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে সংশয় থাকলেও গতকাল শুক্রবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বসে নেই। দলটির পক্ষ থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ডকে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মনোনীত প্রার্থীর নাম (ভোটার নং ১২ ডিজিট) এবং নির্বাচনী আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুযায়ী সকল তথ্য প্রার্থীর নামের সাথে প্রেরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রার্থীর ভোটার আইডির ফটোকপি অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে।
জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং যে ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠিত হবে। ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বর্ধিত সভা করে ১ জন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে।
সেই সুপারিশকৃত নাম উলি্লখিত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকগণের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ড (৬ জনের নাম ও স্বাক্ষর) প্রার্থী চূড়ান্ত করে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠাবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ও প্রতীক বরাদ্দ করবে।
এদিকে প্রহসন জেনেও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকার বিরোধী দল বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখি দল। আমরা নির্বাচন করব, করতে চাই। তবে সেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পরবর্তী সব নির্বাচনে চরম অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে।
ভারতের নির্বাচন কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে জেনারেল মাহবুব বলেন, নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী নয়। সিইসিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে।
অপরদিকে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য পাঁচজনের সুপারিশ লাগবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাঁচজনের সুপারিশ লাগবে। আর ঐ পাঁচজন হলেন, ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই পাঁচজন মিলে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করবেন।
তবে কার কাছে এ সুপারিশ পাঠাবেন কিংবা কে তা অনুমোদন করবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুযায়ী সারাদেশের ইউপি নির্বাচন ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২২ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টির নির্বাচন ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ৭১১টির ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭২৮টির নির্বাচন ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ৭১৪টি নির্বাচন হবে ২৮ মে, এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬৬০টির নির্বাচন ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার।