ইরানের উপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরমানু চুক্তির শর্তাবলী দেশটি পূরণ করেছে বলে জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা যে সবুজ সংকেত দিয়েছে তারপরই ইরানের জন্য এলো বহু প্রত্যাশিত এই বার্তা। খবর: বিবিসি ও রেডিও তেহরান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগারিনি, আইএইএ-এর সদরদপ্তর ভিয়েনায় বলেছেন, এই চুক্তি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতাবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করবে।
পরমাণু চুক্তির আওতায় থাকা শর্তাবলী তেহরান পূরণ করেছে, অতএব এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যেতে পারে, আইএইএ’এর এই ঘোষণাটি-ই ইরানকে এনে দিয়েছে মুক্তির সুবাতাস।
আইএইএ’এর মহাপরিচালক ইউকিয়া এমানো বলেছেন, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে আইএইএ’এর সম্পর্ক এখন একটা নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে। মি. এমানো তার এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বলেছেন, “আজকে আমি এখানে এই মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছি যে, জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশান বাস্তবায়নের লক্ষে ইরান প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই রিপোর্ট আইএইএ-এর বোর্ড অফ গভর্নরস এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলেও দাখিল করা হয়েছে”।
পরমাণু চুক্তির শর্তাবলী ইরান পূরণ করেছে বলে জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থার ঘোষণা আসার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেকে ইরান পিছু হঠায় পৃথিবী এখন আরো নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে।
ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ইরানি জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
ইরানে টুইটার নিষিদ্ধ। তবু প্রধানমন্ত্রী তার টুইটার বার্তায় বলেছেন, “যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা বা জেসিপিওএ উপসংহারে পৌঁছেছে। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এবং এই বিজয়ের দিনে ইরানের জনগণকে অভিনন্দন জানাই।” তিনি আরো বলেছেন, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।
তেহরানের উপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উদ্যোগ থাকলে কঠিনতর সমস্যাও যে সমাধান করা যায়, এই ঘটনা সেই শক্তিশালী ও আগ্রহোদ্দীপক বার্তাই দিচ্ছে।
মি. জারিফ বলেছেন, “ইরান যেহেতু তার সকল শর্ত পূরণ করে অঙ্গীকার রক্ষা করেছে, তাই ইরানের উপর চাপিয়ে দেয়া বহুপাক্ষিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক এবং আর্থিক বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়া হয়েছে”।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও চুক্তি বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই অর্জন এটাই প্রমাণ করছে যে, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ নিরসন করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে সংলাপ এবং ধৈর্যশীল কূটনীতি। সব পক্ষের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে চমৎকার বিশ্বাসযোগ্য প্রচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি বলেছেন, “ইরানের জনগণ ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সমর্থনে তেহরান এ অধিকার অর্জন করল।”
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, “পরমাণু ইস্যুতে ইরান উচ্চাভিলাষী বহুসংখ্যক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ক্রান্তিকাল পেরিয়ে আজ উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে পৌঁছাল।”
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বহু বছরের ধৈর্য ও দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং কঠিন কৌশলগত কাজের মাধ্যমে আজ সব প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং এখন আমরা তা বাস্তবায়ন করছি।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস বলেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।”
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘটনাকে কূটনীতির জন্য ঐতিহাসিক সফলতা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “কূটনৈতিক এ সফলতা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য সংকট বিশেষ করে সিরিয়া যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।”
এ বিষয়ে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইরানের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশংসা করেছেন। তবে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। হিলারি বলেন, “ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা লঙ্ঘন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে যার বিপরীতে আমেরিকার উচিত তেহরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।”
ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ইরান-বিরোধী বাগাড়ম্বর অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেছেন, “চুক্তি করার পরও ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাতিল করে নি।” তিনি বলেছেন, এ চুক্তি কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে ইসরাইল তা লক্ষ্য করবে এবং কোনো ধরনের লঙ্ঘন হলে সতর্ক করবে।
অর্থনৈতিক এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ইরান এখন তার তেল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে পারবে।
পাশাপাশি দেশের বাইরে ইরানের যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আটকে দেয়া হয়েছিল সেগুলোও এখন থেকে হাতে পেতে শুরু করবে তেহরান।