নেশাদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের ক্ষেত্রে পাচারকারীরা নতুন রুট তৈরি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পাচারের জন্য কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার চালান সরাসরি নেওয়া হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল পটুয়াখালী, ভোলাসহ আশপাশের উপকূলীয় জেলায়। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে সড়কপথে ঢাকায় পাচার করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইয়াবার সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকা। পাচারকারীরা নতুন এই রুটকে নিরাপদ মনে করছে। কারণ ওই অঞ্চলে ইয়াবার বিস্তার এবং থাবা দুটোই কম। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহজে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব।
চট্টগ্রামে র্যাব-৭ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা ইয়াবাসহ কয়েকজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই পেয়েছেন। তাই এখন শুধু কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান সাগরপথে চট্টগ্রামে আনার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা ও উপজেলাগুলোতেই পৌঁছে যাচ্ছে।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কক্সবাজার থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার চালান চট্টগ্রামে আসছিল। এমন তথ্য পাওয়ার পর র্যাব বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত র্যাব-৭ প্রায় ৩২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। যার বেশির ভাগই এসেছে বঙ্গোপসাগর দিয়ে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কয়েকজন বড় ইয়াবা চোরাকারবারির পাশাপাশি নগরীর কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও ইয়াবা পাচারে বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্য আছে।
র্যাব কর্মকর্তা মিফতা উদ্দিন আহমেদ জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার চালান নেওয়া হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের জেলায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনার পথে র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী একাধিক বড় চালান আটকের পর পাচারকারীরা নতুন রুটে চলে যায়। তারা ওই রুট নিরাপদ মনে করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরার ছোট ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দিক হারানো কিংবা বিপদ হলে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এর পরও পাচারকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন রুটে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া কয়েকজন ব্যবসায়ী ইয়াবা পাচারে টাকা বিনিয়োগ করেছেন জানিয়ে মিফতা উদ্দিন বলেন, সর্বশেষ গত রবিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে যে ছয় ইয়াবা কারবারিকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরা জানিয়েছেন, সাগরপথে ইয়াবাগুলো কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আনা হয় এবং সড়কপথে ঢাকায় পাচার করা হচ্ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মনজুরুল আলম মঞ্জুও আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের একাধিক মামলা আছে। এর আগে কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাঁর ইয়াবাসহ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল। যদিও মঞ্জু নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অথচ সেই মঞ্জু গ্রুপের কাছ থেকেই র্যাব উদ্ধার করে সাড়ে পাঁচ লাখ ইয়াবা। মঞ্জুর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘সড়কপথে কড়াকড়ির কারণে ইয়াবা পাচারকারীরা বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার-পটুখালীকে নতুন রুটে পরিণত করেছে। এখন খুচরা কারবারিরা ঝুঁকি নিয়ে কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে আসছে। তাদের অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে।’ বড় পাচারকারীরা সাগরপথ ব্যবহার করছেন বলে ওসি জানান।
পুলিশ কর্মকর্তা মহসিন বলেন, ইয়াবার একটি বড় চালান আটকের জন্য তিনি সোর্স নিয়োগ করেছিলেন। সোর্স তাঁকে নিশ্চিত কমরন, চট্টগ্রামে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যদের কড়াকড়ির কারণে পাচারকারীরা রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা নিয়ে গেছে পটুয়াখালীতে। সেখান থেকে সড়কপথে ইয়াবার চালান যাবে ঢাকায়।