সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা। আর এসব ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছেন কক্সবাজার জেলার প্রভাবশালী একটি মহল। কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, অসাধু আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, অর্থলোভী আইনজীবি সহ এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে সমাজের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তানেরা। নিত্য নতুন কৌশল ও নিত্য নতুন পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে সারাদেশে পৌছে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা। সম্প্রতি এমনি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ইয়াবা পাচারে নিত্য নতুন পথ ব্যবহার করা হয়। এমনকি পাচারকারীরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাচার করছে ইয়াবা। সড়কপথে ইয়াবা পাচারের পরিমান কিছুটা কমলেও মারাত্বকভাবে বেড়ে চলেছে আকাশ পথে ও পানি পথে। আর পানি পথে পরিবহনে এরা নিচ্ছে নিত্য নতুন কৌশল। কখনো মাছ ধরার ট্রলার, কখনো মাছের পেটের ভেতর, কখনো বা রাশির মাধ্যমে পানির নিচে করে ইয়াবা পাচার করছে সিন্ডিকেটটি। এছাড়া আকাশ পথে ইয়াবা পরিবহনের সাথে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সিকউরিটি, বেসরকারি বিমানের কর্মচারী ও কয়েকজন আনসার সদস্য জড়িত। আর এসব পাচারের মূল হোতা হাতে গোনা কয়েকজন। তাদের মধ্যে জামায়াতের শীর্ষ এক নেতার আতœীয় বাহারছড়ার জাহিদ, জিয়া গেষ্ট ইন এলাকার এক হোটেল ব্যবসায়ী, সাবেক শিবির ক্যাডার আবেদীন, রুমালিয়ারছড়ার এক ব্যবসায়ীর ছেলে, টেকনাফের এক জনপ্রতিনিধির পরিবারের আতœীয়স্বজন ও ৪-৫ জন পুলিশসহ কয়েকজন সরকারি কর্মচারী রয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে, সড়ক পথে ইয়াবা পাচারের সাথে পুলিশ সদস্য সহ বিজিবি’রও কয়েকজন সদস্য জড়িত। এছাড়া ইয়াবা পাচারের সাথে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেটের যোগ সাজস রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক করে অত্যন্ত সহজেই কক্সবাজার জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব মরণনেশা।
এতে আরো উল্লেখ রয়েছে, সিন্ডিকেটটি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ইয়াবা পাচার করছে। পায়ুপথ দিয়ে কিংবা মুখ দিয়ে ইয়াবা পেটের ভেতর চালান করে পাচার হচ্ছে। এমনিভাবে পাচার করতে গিয়ে ৯ জানুয়ারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার গোরা মিয়ার ছেলে মো. ইউনুছ মৃত্যু বরণ করেন। এর দুদিন আগে ৭ জানুয়ারি পেটের ভেতর করে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালিয়াপাড়ার গবি সুলতানের ছেলে মোশতাক আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাবী করছেন, কৌশলগত কারণেই কক্সবাজার জেলায় ইয়াবা উদ্ধার করা হচ্ছে না। কারণ এখানে ইয়াবা উদ্ধার হলেই জেলার একশ্রেণীর প্রভাবশালী মহল সেই পাচারকারীকে ছাড়িয়ে নিতে তদবীর শুরু করেন। তাদের কথা না শুনলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে ওই মহলটি উঠে পড়ে লাগে।
কিন্তু র্যাব- ৭ অধিনায়ক লে. এস এম সাউদ হোসেন জানান, কৌশল অবলম্বণ করেই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটক করতে হয়। তবে তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পরিচয় দেখেন না।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ১০ লক্ষ ইয়াবা জব্দ করেছে র্যাব। এ ঘটনায় কক্সবাজার শহর কৃষকলীগের নেতা জয়নাল আবেদীনসহ ৮ জনকে আটক করা হয়। একই দিন ৮৬ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ যুবদলের সদস্য সচিব তৈয়ব দু’সহযোগীসহ ঢাকায় আটক করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ৪০ হাজার ইয়াবা সহ সাংবাদিক সেলিম স্ত্রী সহ চট্টগ্রামে আটক হয়। এ আটক পাচারের তুলনায় নগন্য। প্রতিদিনেই কক্সবাজারের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা প্রবেশ করছে। ইয়াবা পাচার রোধ করতে হলে সীমান্তে কাটাতারের বেড়া জরুরী বলে দাবী করেছেন । পাশাপাশি নৌপথে কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর পরামর্শ ও দিয়েছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল। এর সাথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত রয়েছে এমন কর্মচারীদের অন্যত্র বদলী করতে হবে বলেও জানান সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
টেকনাফ -২ বিজিবি’র অধিনায়ক আবু জার আল জাহিদ জানান, সীমান্ত সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারলে পাচার অনেকাংশে কমে যাবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, সীমান্তবর্তী এ জেলার ভৌগলিক দিক দিয়ে পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাগর পথে আর পাহাড় পথে এখন থেকে সহজেই অন্যত্র চলে যাওয়া যায়। এছাড়া সীমান্ত সীমানায় দেওয়াল কিংবা কাঁটাতারের বেড়া নেই। পাশাপাশি এখানকার জনগন সচেতন নয়। সচেতনতা তৈরি করতে পারলে পাচার অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।