1. arif.arman@gmail.com : Daily Coxsbazar : Daily Coxsbazar
  2. dailycoxsbazar@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  3. litonsaikat@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  4. shakil.cox@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  5. info@dailycoxsbazar.com : ডেইলি কক্সবাজার : Daily ডেইলি কক্সবাজার
ঈদ উৎসব সেকাল-একাল - Daily Cox's Bazar News
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ন
নোটিশ ::
ডেইলি কক্সবাজারে আপনার স্বাগতম। প্রতি মূহুর্তের খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
সংবাদ শিরোনাম ::
কট্টরপন্থী ইসলামী দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ: এসএডিএফ কক্সবাজারের আট তরুণ তরুণীকে ‘অদম্য তারূণ্য’ সম্মাননা জানাবে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি Job opportunity বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না, নাকি স্বপ্নের দেশ! আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের আহ্বান আরব লীগের পেকুয়ায় পুলিশের অভিযানে ৮০ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার-১ পেকুয়ায় অস্ত্র নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল : অস্ত্রসহ আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন টেকনাফে একটি পোপা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা ! কক্সবাজারের টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-১ নিউ ইয়র্কে মেয়র কার্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে কনসাল জেনারেলের আলোচনা

ঈদ উৎসব সেকাল-একাল

ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬
  • ৩১৭ বার পড়া হয়েছে
মানুষের জাগতিক কল্যাণের জন্য মনের মাধুরী মেশানো স্বচ্ছ পবিত্র আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হলো উৎসব। জাত, পাত, গোত্র প্রকৃতিতে দৃশ্য-অদৃশ্য উৎসব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বহমান। হিংসা, দ্বেষ, বিদ্বেষ, ক্রোধ, দরিদ্রতা, ক্লিষ্টতা, মলিনতা, হানাহানি হতাশাগ্রস্ত সমাজে উৎসব আনন্দ একটি ঐক্যবদ্ধ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। উৎসব হতাশাগ্রস্ত হতোদ্যম একটি জাতিকে চিরবহমান এক উচ্ছ্বল প্রাণ প্রাচুর্যের ঝর্ণাধারায় নিয়ে যায়। মানুষ উৎসবকে কেন্দ্র করে আত্মার প্রাচুর্যের শক্তিতে ফিরে যায়। উৎসব শুধু আনন্দ বিনোদন নয়, মানুষের জাগতিক জীবনের সাথে আত্মস্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই উৎসবের আয়োজন সৃষ্টি হয় কোনো লৌকিক আচার-আচরণ, উপাখ্যানকে কেন্দ্র করে নতুবা বিজয়ের কোনো জাতীয় বীরের অথবা কোনো বিগ্রহকে ঘিরে জাতিতে জাতিতে বিভিন্ন সময় নির্দিষ্ট দিনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় নিজ নিজ জাতির উৎসব। দৃশ্যমান উৎসব আনন্দের কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি প্রকৃতির আনন্দ আয়োজনে তাকাই তাহলে ঋতুভিত্তিক পরিক্রমায় চৈত্র বৈশাখের খটখটে দাবদাহে শুষ্ক বিফলা জমিতে আষাঢ়ের বর্ষণে বিফলা জমি যখন সবুজ পাতায় নিবিড় ঘন অরণ্যে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, নীরবে ঘটে যাওয়া প্রকৃতির আনন্দ আয়োজন প্রকৃতি উৎসব নয় কি?
কবে কখন কোন সময়ে মানুষ উৎসব আয়োজনে এবং উৎসব উপভোগে ব্যাপৃত হয়েছিল প্রাচীন ইতিহাস খুঁজে তা বের করা কঠিন ব্যাপার। প্রস্তরযুগের গুহাবাসী আদিমানব যখন পাথরে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানো শিখেছিল সে আগুনে কাঁচা গোশত ঝলসিয়ে গোশতের পরম সাধের উপভোগে কোনো আনন্দ আয়োজনে মেতে উঠেছিল কিনা এবং সে আনন্দ আয়োজন প্রাকৃত জনের উৎসব ছিল কি না কে জানে? তবে এ কথা ঠিক এবং স্বীকার্য সত্য পৃথিবীর আদি মানবদের মহাশক্তির কাছে আত্মসমর্পণের একটি স্থায়ী এবং প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, সে বিশ্বাসের পুঞ্জীভূত শ্রদ্ধাভাজনের মাধ্যমে আদি মানবের মনে ধর্মীয় প্রণোদনার সৃষ্টি হয়েছিল; সেই প্রণোদনাই অন্ধকার যুগে আগুন দিয়ে মৃতদেহ সূর্য বিগ্রহ প্রতীকের মাধ্যমে এবং এ সব প্রতীককে কেন্দ্র করে উৎসব আয়োজনে মেতে উঠেছিল। পারতপক্ষে জরা, বার্ধক্য, মৃত্যু ও প্রকৃতি রুদ্ররোষকে প্রতিহত করতে আদিম মানুষ তাদের সভায় প্রার্থনা নৃত্যগীতের মাধ্যমেই এই বিরূপ এবং বিশাল শক্তিকে জয় করতে চেয়েছিলেন। এবং সেই জয় করার ইচ্ছা আকাক্সক্ষার আয়োজনটা ছিল উৎসবের মাধ্যমে।
উৎসবের শ্রেণী বিভাজনে নিজ নিজ জাতিতে ঋতুভিত্তিক উৎসব হয়। প্রত্যেকটি জাতির, দেশের নিজস্ব কিছু অনুষ্ঠান আছে সে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটি জাতিরই জাতীয় উৎসব পালিত হয়। নিজ নিজ জাতির উৎসবের উৎস অনুসন্ধান করতে হলে অবশ্যই সে জাতির শেকড়ের, লোকজ ঐতিহ্যের উৎসের দিকে ফিরতে হবে। জাতির সৃষ্টি, সংস্কৃতি গড়ে ওঠে নিজ নিজ জাতির কৌম-কৃষি সভ্যতাকে কেন্দ্র করে, এই কৌম-কৃষির ব্যবস্থায় পানাহার, বীজ বপন, শষ্যফলন, শষ্যকর্তন, জীবন ধারণ সম্পর্কযুক্ত লোকাচার, লোক বিশ্বাস, লোক সংসার ব্যবহার, ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর উৎসব বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং মূলত সে জাতির মূল অবকাঠামোর পরিচয় বহন করতে সাহায্য করে। এসব কিছু ছাড়িয়ে মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো জাতির নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় উৎসবের দোর্দণ্ড দাপটে অন্য উৎসবের প্রভাব ম্লান হয়ে যায়।
মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আয়োজন, ঈদ উৎসব। এই উৎসব মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা, দুটো উৎসবের পেছনেই আছে ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক কল্যাণমূখী কাজের জন্য ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা। রমজানের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম এবং তাকওয়ার ফলশ্রুতি হলো ‘ঈদুল ফিতর’ উৎসব। প্রাচীন বাংলায় মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস আটশত বছরের বেশি নয়। তুর্কি, আফগান, পাঠান, আরবি বিজেতাদের সাথে মুসলমান দরবেশ, ইসলাম প্রচারকদের আগমন সফল দরবেশ ও তার অনুসারীদের নিয়ে বাংলায় বৌদ্ধ হিন্দু জন অধ্যুষিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করা কঠিন ছিল। কালক্রমে ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে নিগৃহীত, নির্যাতিত নিম্নবর্ণের লোকেরা দলে দলে ইসলামের সুমহান পতাকাতলে সমবেত হয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
প্রাচীন বাংলায় ঈদ উৎসবের আনন্দ আয়োজন কেমন ছিল তা জানার উপায় নেই। সুলতানী আমলে (১৩০০-১৫৩৮ খ্রি:) মোটামুটি দুইশত বছরের বেশি সময়ে নগরকেন্দ্রিক ঈদ উৎসবের কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায়। গৌড় পান্ডুয়া, সোনারগাঁওকেন্দ্রিক রাজধানী শহরগুলোতে তৎকালীন সুলতানদের নির্মিত মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো। ঈদ উপলক্ষে সুলতান, আমীর, ওমরাহদের উদ্যোগে ঈদের বর্ণাঢ্য মিছিল হতো, এ মিছিলে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমাহার থাকত। ইসলামী পতাকা, রঙ-বেরঙের পতাকা বহন করে চলত পাইকরা, মিছিলের অগ্রভাগে রাজকীয় হাতিতে অবস্থান করতেন সুলতান স্বয়ং। ছাতাবাহী অন্যান্য পাইক বরকন্দাজ দল থাকত পিছু পিছু। ঈদের জামাতে সুলতানদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল ‘বাদশাহী কা তখ্ত।’ ‘নামাজের সময় সুগন্ধি গোলাপজল ছিটিয়ে দেয়া হতো। সুলতানদের উদ্যোগে মসজিদ আঙ্গিনায় নামাজ শেষে ঈদের খাবার দাবার বিতরণের প্রচলন ছিল। কখনোবা জৈষ্ঠ্যের প্রচণ্ড রোদে আমবাগানের ভেতরে, প্রশস্ত জায়গায় বা দীঘির তীরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো। প্রাসাদের আঙিনায় খোলা চত্বরে ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো। রাজধানীতে ঈদকেন্দ্রিক নাগরিক বিনোদন কেমন ছিল তাও জানার খুব বেশি উপায় নেই। ধারণা করা যেতে পারে ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্যে খাঁচায় আবদ্ধ হিংস্র জন্তুদের নিয়ে খেলাধুলার প্রচলন ছিল, লাঠি খেলা, মল্লযুদ্ধ ছাড়াও রাজদরবারে কাসীদা, রাজকবিদের ‘শায়ের’ এবং কাঞ্চনিদের নৃত্যগীত ও ছিল সুলতান, আমীর ওমরাদের বিনোদনের, উপভোগের প্রধান মাধ্যম। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন গোশতের কাবাব, রুটি, মিষ্টান্ন, ফলমূল এবং পানিয় হিসেবে একধরনের সুমিষ্ট গোলাপজল ছিল প্রধান। মসলিন কাপড় ছিল হেরেমবালাদের পরম আরাধ্য কাপড়। খাসসা, মলমল, মসলিনের উত্তরীয়, আলোয়ানে, মূল্যবান পাথরের মালায় সজ্জিত হতেন সুলতান, শাহজাদা।
নগরকেন্দ্রিক ঈদ বিনোদন ছাড়িয়ে গ্রামীণ ঈদ আনন্দ আয়োজন কেমন ছিল? ইতিহাস সেখানে নীরব। একটু কল্পনা করে বলতে পারি ঘন বাঁশঝাড় ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বনের জঙ্গল, ডোবা, খাল, বিল, পুকুরের পাশে ছোট ছোট কুটির শিল্পের গ্রাম, গ্রাম লাগোয়া নদী, খাল, বিল, পুকুরের খর মাটি গুলিয়ে শরীর, কেশ মর্দন, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন তহবন যা সযত্নে রক্ষিত ছিল খড়ের ঘরের চাল ছোঁয়া লম্বা বাঁশে, অতি সযত্নে এগুলো পরে নদী পাড়ে, খোলা প্রাঙ্গণে ঈদের উৎসবে উপস্থিত হওয়া, নামাজ শেষে কোলাকুলি, একে অপরের প্রতি কুশলবিনিময়, দাওয়াত দেয়া, মুরুব্বিদের কবর জিয়ারত, বাড়িতে ফিরে নিজ গাইয়ের দুধের তৈরি ফিরনি, পায়েস, আখের গুড়ের মিষ্টান্ন, দুপুরে নিজ ঘরের পালা মোরগ-মুরগির গোশত রান্না, খিচুড়ি, বাড়ির আঙিনায় লিচুগাছের লিচুু আখের মিষ্টি শরবত, চিকন চালের ভাত হয়তোবা বাঙালির নিজস্ব ঘরানার লোকজ খাবার-দাবার বাঙালির ঈদের রসনার বাসনাকে পরিতৃপ্ত করত। এত কাপড় চোপড়ের ব্যবহার হয়তো ছিল না তখন, বাঙালি তাঁতীদের তৈরি নিজস্ব কাপড় চোপড়ই ছিল বাঙালির ঈদ। বাহ্যিক আনন্দ উৎসবের মধ্যে লাঠিখেলা, মোরগযুদ্ধ, গ্রামীণ খেলাধুলাই ছিল ঈদ বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। রাতে হয়তোবা বাউলদের আসর বসত, পুঁথিপাঠের আসর জমে উঠত। বেড়ানো খেলানো পাড়া প্রতিবেশীদের এমনকি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকেও আপ্যায়ন করত। এ ছিল সামাজিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর। রমজানের চাঁদ দেখা থেকে সারাগাঁয়ে নেমে আসত ঈদ উৎসবের আমেজ, তা চলত ঈদ শেষ হবার বেশ কিছু দিন পর্যন্ত। সুলতানী যুগে শাহী খাবার পোলাও, কোরমা, কালিয়া, জর্দার প্রচলন ছিল না এসব খাবার তৈরিতে রীতিমতো অজ্ঞই ছিল বাঙালি মুসলমানেরা। তবে আপ্যায়নের শীর্ষে ছিল পান সুপারি। পান সুপারি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন ছিল বাঙালির চিরায়ত আদি ভদ্রতার লক্ষণ।
মুঘল যুগে ঢাকা রাজধানী হওয়ার পর ঈদের প্রধান বাজার মিলত ‘বাদশাহী বাজারে’ যা বর্তমানে চকবাজার হিসেবে চিহ্নিত। ‘বড় কাটারা’ ‘ছোট কাটারা’ ‘নীমতলী’ ‘ইমামবাড়া’ ‘লাল কেল্লা’ মূলত ইসলামপুর, চাঁদনীঘাট, শোয়ারিঘাট, লাল কেল্লা, কেন্দ্রীয় বুড়িগঙ্গা তীরঘেঁষা মুঘল রাজধানীতে জমে উঠত ঈদ উৎসব। মুঘল যুগের ঈদ উৎসব আয়োজনে সুবাদারদের আয়োজিত বিশাল ঈদ মিছিল, সুলতানী আমলের রেওয়াজ অনুসরণ করেই ঈদের জমজমাট মিছিল হতো। সে মিছিলে শামিল হতেন রাজধানীর অভিজাত শ্রেণীর সর্বস্তরের লোকজন। সে সময়ে বাদশাহী ঈদগা হতে মহাসমারোহে ঈদের জামাত হতো। তখন ‘বাগ-ই-বাদশাহীতে’ (বর্তমানে রমনা উদ্যান) মুসাফিরদের জন্য ঈদের খাবার দাবারের বন্দোবস্ত হতো। মোরগ, পোলাও, কোরমা, পরোটা, কালিয়া, জর্দা এসব খাবার দাবার মুঘল যুগে অভিজাত পরিবারদের মধ্যে পরিচিত এবং বহুলভাবে প্রচলিত হয়েছিল। সুবাদারেরা ‘ঝরোকা’ মঞ্চে প্রজাদের দর্শন দিতেন। বিকেলে কাঞ্চনিদের নৃত্য ছিল রাজদরবারে। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সুবাদার ইসলাম খানের দরবারে প্রায় তের শত কাঞ্চনি (নৃত্যশিল্পী) সুলতানের মনোরঞ্জনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকত। মুঘল আমলেও গ্রামীণ মানুষের ঈদ উৎসবের ধারা একই ছিল। ঢাকার শৌখিন ধনজ লোকদের প্রিয় কাপড় ছিল মসলিন। সে সময় ঢাকার সোনারগাঁয়ের মসলিনের সুনামতো সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল।
ব্রিটিশ যুগে মুঘলদের পতনের সময় সরকারি ঈদের জৌলুশের ঘাটতি পড়লেও ঢাকার অভিজাত পরিবারে তার কোনো ছায়া পড়েনি। বরঞ্চ রূপান্তরের ধারায় গ্রামগুলো একটু অগ্রসর হয়ে পোশাক পরিচ্ছদ, খাবার দাবারে একটু ভিন্নতা যোগ হয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার সামান্য উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পিরিয়ডে নতুন নতুন গঞ্জ, বাজারের সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে দর্জি, কাপড়ের দোকান, নগরায়ণের সংস্পর্শে খাদ্য দ্রব্যের মেন্যুতে নগরভিত্তিক খাদ্য তালিকার কিছু অংশ ঢুকে গিয়েছিল। রূপান্তরের ধারায় খাদ্য বিলাসের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাঙালির উৎসব ধারাও পরিবর্তন হয়েছিল। এ ধারা চলেছিল ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত। পাকিস্তানের সময়ে সম্ভবত বাঙালির ঈদ উৎসবে খাদ্যদ্রব্যের বিলাসে ‘সেমাই’ একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব খাবার হিসাবে মর্যাদা পেয়েছিল। ঈদের জামাত মসজিদের পাশাপাশি ঈদগাহে হতো। এ রেওয়াজ চালু ছিল সুলতানী যুগে। জেমস টেইলর আসেন (১৮৭০ খ্রি:) তখন তিনি শীতলক্ষ্যার তীরে ঈদের জামাত দেখেছিলেন। পাকিস্তান আমলে ঘরোয়া এবং বাহ্যিক গ্রামীণ খেলাধুলার পাশাপাশি পরিবার পরিজনসহ ‘সিনেমা’ দেখা বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল। ব্রিটিশ পিরিয়ডের শেষ দিকে ঢাকার নবাবদের ‘আহসান মঞ্জিল’কেন্দ্রিক এলিটদের একটি আলাদা বিনোদন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।
ঈদ আনন্দ। পবিত্র, মধুর আনন্দের সুধারসে সিক্ত হয় একটি জাতি, রাষ্ট্র। উৎসবের আনন্দে একটি জাতি আত্মশক্তি ফিরে পায়। প্রাণচাঞ্চল্য এবং কর্মচাঞ্চল্যে ভরে তোলে পৃথিবী। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এবং গরিব দুঃখি শোকাতুর মানুষের সাথে রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় অভিজাতদের ভাব-বিনিময় আচার-ব্যবহার এবং সৌজন্য বোধের এক ঐশ্বরিক আনন্দ আয়োজন ঈদ। তবে যারা ব্যবসা করার জন্য মানুষকে ঠকিয়ে, মিথ্যা বলে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন, তারা অবশ্যই ঈদের পবিত্র আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। সেই প্রশ্নটি কিন্তু তাদের বিবেকের কাছে রইল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2020 Dailycoxsbazar
Theme Customized BY Media Text Communications