এই ঈদকার্ডগুলো আগে এলাকার গলির দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো থাকত…
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক :
কিছুক্ষণ পর পরই বেজে উঠছে মোবাইলের মেসেজ টোন। ই-মেইলের ইনবক্সে আর ফেসবুকের ম্যাসঞ্জারেও জমতে শুরু করেছে নানা ভাষায়, নানা ছন্দময় মেসেজ আর চাঁদ-মিনার কিংবা ক্যালিওগ্রাফির ছবি। বর্তমানে ঈদ শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের আধুনিক মাধ্যম এগুলোই।
কিন্তু একটা সময় ঈদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়া এবং সৌহার্দ্যের বন্ধনকে অটুট রাখার অন্যতম মাধ্যম ছিল ঈদ কার্ড। আধুনিক প্রযুক্তির কাছে সেই বাড়তি আনন্দ হেরে গেছে। সময়ের সাথে সাথে সারা দেশের মতোই মানিকগঞ্জেও ঈদ কার্ডের প্রচলন অনেকটাই কমে গেছে। কিছুদিন আগেও আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব কিংবা সুসম্পর্ক আছে যাদের সাথে এমন মানুষদের কাছে ঈদ কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাত সবাই। ঈদকার্ড ছাড়া যেন আনন্দই জমতো না ঈদের। শত অভিমান দানা বাঁধতো মনের মাঝে। অথচ কালের পরিক্রমায় আবহমান গ্রাম বাংলার এ সংস্কৃতিটি হারিয়ে গেল ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফেইসবুক, ই-কার্ড, মোবাইল ফোন, এসএমএসের এর আড়ালে। ফলে এখন ঈদ কার্ড আর আগের মতো মর্যাদাও পায় না। তবে অধিকাংশের ধারণা-ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা মাধ্যমগুলো আজও ছাপিয়ে যেতে পারেনি কাগুজে ঈদ কার্ডের আবেদনকে।
কার্ড কিনে নিজের হাতে দুই লাইন লেখার চাইতে মোবাইলের কী-প্যাড আর কম্পিউটারের কী-বোর্ডে লিখতেই সবাই এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে একটি ম্যাসেজ লিখে সবাইকে ফরওয়ার্ড করা অথবা ফেসবুকে একটি ‘ঈদ মোবারক’ লেখা ছবিতে সবাইকে ট্যাগ করে দেয়াটা বর্তমানে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগে রমজানের মধ্যভাগ থেকে শুরু হতো বেচাকেনার ধুম। নানান ডিজাইন, প্রচ্ছদ আর পছন্দসই রঙের মাঝে খুঁজে নিত প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর মজাটা। অথচ সময়ের ব্যবধানে নিষ্প্রাণ হয়ে গেল ঈদ কার্ড প্রথা। এমন এক সময় ছিল যখন শুধু ঈদ কার্ড বিক্রি করে অনেক বেকার যুবক আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতো ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম।
প্রযুক্তির এ যুগেও মানিকগঞ্জ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গিফট আইটেম শপে ঈদ আয়োজনে রেখেছে নানা নকশা আর ডিজাইনের ঈদ কার্ড। আছে ক্যালিগ্রাফির ছাপ। তবে আগের মতো তেমন নেই বেচাকেনা।
শুভেচ্ছা বিনিময় ধারায় প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়লেও কাগুজে ঈদ কার্ডের গুরুত্ব আছে আগের মতোই, এমন অভিমত মানিকগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নুর। তিনি বলেন, ‘ঈদ কার্ডের প্রচলন কখনো হারিয়ে যাবে না। সময়ের পরিবর্তনে কাগুজে ঈদ কার্ডের প্রচলন কমলেও এর আবেদন ফুরাবে না।’
এ ব্যাপারে সরকারী দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদ তারেক ও নুসরাত তাবাসসুম বলেন, এত সময় কই। মোবাইল এসএমএস দিলে খরচ কম এবং অনেক দূরপ্রান্ত থেকে পৌঁছানো সহজ। কার্ডের বদলে মোবাইল মেসেজ আর ফেসবুকেই সব বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিব।
কয়েক বছর আগেও মানিকগঞ্জ জেলাশহর ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন বাজারসহ স্কুল, কলেজের সামনে দেখা যেত অস্থায়ী কিছু দোকান। যেগুলোতে ঈদ কার্ডের বেচাকেনা চলত পুরো রমজান মাস জুড়ে। বিভিন্ন মহল্লা ও পাড়ার স্কুল কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা মিলে সেসব দোকানগুলো তৈরি করত। বিক্রি করতো পোস্টকার্ড সাইজের কাগজে ছাপা ঈদকার্ডসহ বিভিন্ন উপদেশ মূলক দাওয়াত ও ভিউকার্ড। তাছাড়া ঈদকার্ডের চাপে হিমশিম খেতো ডাকঘরগুলোও। দেশি-বিদেশি দূরের বন্ধুদের কাছে ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠানো হতো ঈদকার্ড।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ মন্ত্রী-এমপি-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারী প্রশাসন, ব্যাংক, কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কার্ডে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও সারা দেশেই সাধারণ মানুষের মাঝে কার্ড আদান প্রদানের রেওয়াজ ও চাহিদা নেমে এসেছে প্রায় শূণ্যের কোঠায়।