উখিয়া উপজেলার সম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ৩ টি হত্যাকান্ড নিয়ে সর্বত্রে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামলা, পাল্টা মামলা সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব মামলার বাদী পক্ষের অভিযোগ, উখিয়া থানা পুলিশ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। তবে বিবাদীদের দাবী প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে সংগঠিত ঘটনায় তাদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে। এসব বাদী-বিবাদীদের পাল্টা অভিযোগ এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাধারন জনমনে মিশ্র প্রতিত্রিুয়া দেখা হয়েছে।
জানা গেছে, উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আরফাত হত্যা মামলার আসামীরা ৬ মাসেও গ্রেফতার হয়নি। গত ২০১৫সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪ টায় আনজুমানপাড়া ফিশারি এলাকা দিয়ে সার পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাচারকারীরা আরফাতের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে গুরুতর করে, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর সে মারা যায়। এ ঘটনায় আরফাতের পিতা জাফর আলম বাদী হয়ে বশির আহমদ (৩০), হাফেজ আহমদ (২৮), নুর আহমদ (৩৫), মৌলভী তৈয়ব প্রকাশ- বাইট্টায়া (৪৫), আবদু শুক্কুর (৪৫), আব্দুর রহিম (২৩), আলী আহমদ (৩২), ইব্রাহিম আজাদ (৩৫), মনজুর আলম (৩৫), সাইফুল ইসলাম (২৮) ও নুরুল আলম (৪৮) সহ ১১ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার আসামী কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ বলেন, সে এ ঘটনায় কোন প্রকার জড়িত ছিলনা, একটি পক্ষ স্থানীয় নির্বাচনে আমি প্রার্থী হব জেনে আমাকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আসামী করা হয়েছে। তবে বর্তমানে আমি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছি।
এদিকে গত ২৮ ডিসেম্বর রাত ১ টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শাহিন বাড়ী ফেরার পথে জাহাঙ্গীর সহ তার অপরাপর কর্মীরা উখিয়া সদর জামান হোটেলের সামনে তার পথ আটকিয়ে উপর্যপূরী চুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করে। পরের দিন নিহতের মা শাহেদা বেগম বাদী হয়ে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সি.সহ-সভাপতি আবছার কামাল(২৮) সহ ৮ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করে। এ মামলা মনি দাশ (২০) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ মামলাটি নিয়ে উখিয়ার দু’পক্ষ রাজনৈতিক ভাবে একে-অপরকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মকবুল হোসেন মিথুন আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের আচরন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসামীকে সাথে পুলিশের আতাঁত থাকায় আসামী গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এ মামলার ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার কামাল পাশা এ প্রতিবেদককে মোবাইল করে জানান, তাকে ও তার ভাই আবছার কামাল পাশাকে প্রতিপক্ষ কয়েকজন ব্যাক্তি রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করার জন্য মামলায় অন্তভূক্ত করেছে। তিনি শাহিন হত্যার সুষ্টু বিচারের স্বার্থে মামলা নিয়ে নাটক না করে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামীদের চিন্থিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
এছাড়াও উখিয়ার আলোচিত আরেক হত্যা মামলা নিয়েও চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এতে প্রকৃত আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালীর জুমের ছড়ার গহীন জঙ্গল থেকে উখিয়া থানা পুলিশ গলিত একটি লাশের কংকাল উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে কক্সবাজারে দাফন সম্পন্ন করে। গত ৮ ফেফ্রয়ারি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী শিয়াইল্যাপাড়া গ্রামের নিঁেখাজ ইয়াবা বাহক আলমগীর প্রকাশ- ভুলুর স্ত্রী রুজিনা আক্তার উদ্ধার হওয়া কংকাল টি তার নিখোঁজ স্বামী ভুলুর বলে দাবী করে। এ ঘটনায় ৮ ফেফ্রয়ারী রুজিনা আকতার বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত -২ এর মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘ শুনানী শেষ আদালত উখিয়া থানা পুলিশকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহনের নির্দেশ দেন। পরে উখিয়া থানার জিআর মামলা নং-০৮/১৪-০২-২০১৬মূলে মামলাটি রুজু করে। এতে আকবর আহমদ (৪৭) পিতা মৃত ইয়াকুব আলী, আবদুর রহিম প্রকাশ রহিম্যা ডাকাত(২৭) পিতা মৃত ইয়াকুব আলী, জিয়াবুল হক (২৫) পিতা আবদুল নবী, কামাল উদ্দিন প্রকাশ চুরি কামাল (২৮) পিতা মৃত ছুরুত আলম, ফকর উদ্দিন প্রকাশ ফকুইজ্জা ডাকাত (৩৫) পিতা মৃত হোছন আলী, আবু তাহের (৩৩) পিতা মোঃ হোছন, নুরুল হক ডাকাত (৪৪) পিতা মৃত সোলেমান মিস্ত্রি, মিজানুর রহমান (২১) পিতা বদিউর রহমান, আশিক্যা (২০) পিতা সৈয়দ নুর, জয়নাল আবেদিন (২৫) পিতা গোলাম কাদের, জসিম উদ্দিন (২৩) পিতা মৃত ইয়াকুব আলীকে আসামী করা হয়। মামলার বাদী রোজিনা আকতার অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীর কোন আপন ভাই নেই, জিয়াবুল হককে আমার স্বমী ভুলুর ভাই বানিয়ে হত্যাকারীরা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী আকবর আহমদ সহ অন্যান্যরা ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তার করা মামলার মুল আসামী আকবর আহমদ এখনো গ্রেফতার হয়নি।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব মামলার কিছু সংখ্যক আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। বাকীরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। এরপর মামলার অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে, তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষীদের ব্যাপারে আদালতে অভিযোগপত্র প্রেরণ করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।