উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন অজ পাড়াগাঁয়ের লোকালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১৫টি ইটভাটা। এরমধ্যে শুধুমাত্র উপজেলার হদলিয়া পালং ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে ৬টির মতো অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। ইটভাটার চারদিকে অসংখ্য গ্রামের অগণিত ফলবান বৃক্ষে কোনো ফুলফল আসছে না, ধ্বংস হচ্ছে পানের বরজ ও শাকসবজিসহ বোরো চাষাবাদ। বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ ও ফসলি জমির মাটি এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হওয়ায় একদিকে যেমন ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি হরাস পাচ্ছে, অপরদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ইটভাটা থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে ইটভাটা এলাকায় আশপাশের গ্রামগুলোতে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন সময়ে এসব অবৈধ ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি আদৌ। ফলে দিন দিন এসব অবৈধ ইটভাটার মালিকরা আরো বেপরোয়াভাবে ইটভাটা সম্প্রসারণ করে বহালতবিয়তে ইট বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে উখিয়া উপজেলার হদলিয়া পালং ইউনিয়নের খেওয়াছড়ি ও পাতাবাড়ি সংলগ্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, রামু খুনিয়াপালং এলাকার শাহ আলম প্রকাশ শানু কোম্পানি মালিকানাধীন এমআরসি ব্রিক ফিল্ড এবং তৎসংলগ্ন চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা পলাশ বড়ুয়া মালিকানাধীন কেআরবি ব্রিক ফিল্ডে মাটি বিক্রির জন্য ফসলি জমির উপর বিরাট বিরাট গর্ত করে মাটির স্তূপ করা হয়েছে। নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে ইটভাটা এলাকাগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। এতে চাষাবাদের ক্ষয়ক্ষতিসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন হরাস ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জমির সবচেয়ে ঊর্বর অংশ হচ্ছে ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি ওপরের অংশ। জমির উক্ত অংশটুকু (টপ সয়েল) ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে ১৫ থেকে ২৫ বছর স্বাভাবিক ফলন হয় না।
অন্যদিকে ইটভাটাগুলোতে নিচু টিনের চিমনির পরিবর্তে ১২০ ফুট উঁচু পাকা চিমনি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটা মালিক তা মানছেন না। টিনের চিমনিগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ইটভাটা এলাকার পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দু সোবাহান, সালাম উল্লাহসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, নিচু চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া শ্বাস নিঃশ্বাসের সাথে মানুষের কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করে নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে এলাকার বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে স্থানীয় বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ। ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুল মজিদ জানান, ইটভাটায় দৈনিক প্রায় ৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়ে থাকে।
এতে বন উজাড় হয়ে পরিবেশের জন্য হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে এ ইটভাটাগুলোতে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এখানে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় বন জঙ্গলে সবুজ বৃক্ষ নিধন করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।