SAMSUNG CAMERA PICTURES
উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে বনভূমি দখল অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বনরেঞ্জের আওতাধীন রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে তৈরি করা হচ্ছে নানা প্রকার স্থাপনা। সরকার বনভূমি রক্ষা করে বন বাগান সৃজনের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে সারা দেশব্যাপী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও ভূমিগ্রাসী চক্রের পরিবেশ বিধ্বংসী তান্ডব অব্যাহত থাকার ফলে বনভূমি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবী করে পরিবেশবাদী সচেতন মহল মনে করছেন বনভূমি রক্ষায় সরকার কঠোর না হলে সংকুচিত হয়ে একসময় শূণ্যের কোটায় চলে যাবে বনভূমির আয়তন।
উখিয়া বনরেঞ্জের তথ্যমতে, এ উপজেলায় রক্ষিত ও সংরক্ষিত প্রায় ৪০ হাজার একরেরও অধিক বনভূমি কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তা নেই। ১৯৮৫ সালে সরকার লট নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় শুরু হওয়া বনভূমি দখলের রেওয়াজ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন অপ্রতিরোধ হয়ে উঠেছে। ইনানী বন রক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, যেভাবে বনভূমি দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতা শুরু হয়েছে তা প্রতিরোধ করতে হলে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি মান্দাতার আমলের বন আইন সংশোধন পূর্বক বন বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল বাড়াতে হবে। তা নাহলে বনভূমির অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, রাজাপালং ইউনিয়নের বন সমৃদ্ধ এলাকা দোছরী বনবিটের আওতাধীন প্রায় আড়াই হাজার একরেরও অধিক বনভূমি বেদখলে চলে গেছে। পাহাড়, টিলা, জলাভূমি ও খাল নদী বেষ্টিত উক্ত বনভূমির পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করে ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে প্রায় হাজারেরও অধিক কাঁচা পাকা স্থাপনা। দোছরী বিটের অধীনে একজন বিট কর্মকর্তা থাকলেও সে অপরাধী চক্রের সাথে আতাত করে টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকার কারণে বনভূমি দখলের মাত্রা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ। দোছরী ছাড়াও তেলখোলা-মোছারখোলা সহ বৃহত্তর বনভূমি নিয়ে গঠিত মোছারখোলা বনবিটের সংরক্ষিত বনভূমি এখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন। বিট কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রায় হাজারেরও অধিক বনভূমি বর্তমানে ভূমিগ্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। পাহাড় কেটে বাঁধ নির্মাণ, খাল ছরা দখল করে মাছ চাষ সহ বিভিন্ন প্রকার চাষাবাদের ফলে উক্ত বনভূমিতে এখন বাগান সৃজনের মতো কোন পরিবেশ নাই।
সম্প্রতি বনভূমির দখল বিক্রি করে টাকা লেনদেনের ঘটনা নিয়ে জবর দখলকারী চক্রের হামলায় মোছারখোলা বনবিট কর্মকর্তা সহ ৩ জন আহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মোছারখোলা বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্লীনতাহানী ও বনভূমির দখল বিক্রির নানা অভিযোগ এনে গ্রামবাসী ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। তবে বিট কর্মকর্তা মাসুদ সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মির আহমদ জানান, প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকার কারণে ভুমিগ্রাসী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ভূমি দখলকারী ও পাহাড় কেটে মাটি পাচারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা রুজু করা হয়েছে।