কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন উখিয়া বন রেঞ্জের থাইংখালী বনবিটের নিয়ন্ত্রনাধীন ৪০ একর বনভূমিতে ২০১৩-১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সৃজিত সামাজিক বনায়নে বর্তমানে সবুজ রঙের একটি সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছু নেই। রিজিলিয়েন্ট পার্টি সিপেটরি এফরেষ্টেশন এন্ড এরি ফরেষ্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ বন বিভাগের সমন্বয়ে এ বাগানটি সৃজন করে। বাগানে বিভিন্ন প্রকারের লক্ষাধিক চারা রোপন করলেও বর্তমানে কয়েকটি গাছের গোড়ালি ছাড়া কিছু নেই। গত ১ ফেব্রুয়ারী প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুছ আলী, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক আকবর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক উত্তম কুমার সাহা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আব্দুল লতিফ মিয়া, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির, সহকারী বন সংরক্ষক জি এম কবির, সহকারী বন সংরক্ষক সরওয়ার আলম, রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল আলম। প্রতিনিধিদল বনায়ন পরিদর্শন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
সরেজমিন এ উপজেলার থাইংখালী বিশ্ব ব্যাংকের সৃজিত বনাঞ্চল ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, থাইংখালী ষ্টেশনের দক্ষিণে এবং থাইংখালী-তেলখোলা সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় বিশাল বনভূমি জুড়ে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ বন বিভাগের সমন্বয়ে ২০১৩-১৪ সালে ৪০ একর বনভূমিতে এ সামাজিক বাগানটি সৃজন করেন। শিলকড়ই,কদম,জাম,শিমূল,আমলকী,হরিতকি,বহেড়া,বকাইন,অর্জুন,ছাতিয়ান,চিকরাশি ও আকাশমণি ইত্যাদি জাতের প্রায় লক্ষাধিক চারা রোপন করেন। চারা রোপনের পর পরিচর্যার জন্য বিশ্ব ব্যাংক কোটি কোটি বরাদ্দ দিলেও থাইংখালী বিট কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নান তৎকালীন উখিয়া রেঞ্জ অফিসার রেজাউল করিম মিলে আত্মসাৎ করেন। যার ফলে নানান প্রকার লতা-পাতা, গাছ-গাছালি গজে রোপিত চারা গুলো ধ্বংস করে দেয়। উক্ত সৃজিত বনায়নে ১০০জন উপকারভোগী নিয়োগ দেন বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। নিয়োগকৃত উপকোরভোগীর নিকট থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন তিনি। এছাড়াও এক সময়ের অভয়ারণ্য থাইংখালীর বনাঞ্চল আজ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিট কর্মকর্তা এলাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে বিরাণ ভূমিতে পরিনত বনভূমি আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্লট আকারে। প্রতি ৪০ শতক বনভূমি ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা দাম দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ বিট অফিসার।স্থানীয় সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বন বিভাগ এখানকার বনাঞ্চল ধ্বংস-জবর দখলের পরষ্পর বিরোধী ভুমিকায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু মোছারখোলা এলাকার তমিম গোলাল, জামতলী এলাকার ইব্রাহীম, তেলখোলা গ্রামের আব্দুলাহ, পালংখালীর আবুল ফয়েজ, সাবেক ইউপি মেম্বার সিরাজুল বশর সহ অনেকে বলেন, এক সময় বনাঞ্চলের মালিক সরকার থাকলেও বর্তমান অবস্থায় মনে হয় এসবের মালিক কিছু প্রভাবশালী, বনকর্মী ও ভিলেজার হেডম্যানরা। পালংখালী কালু হেডম্যান সহ ভিলেজার ৫/৬ জন এবং মাঝে মধ্যে বনকর্মীরা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সাধারণ লোকজনের মাঝে বন ভুমির দখল সীমানা নির্ধারণ করে দেয় বলে তাদের অভিযোগ। তারা আরো বলেন, প্রতি কানি বা ৪০ শতক বন ভুমি দখল বাবদে বনকর্মী, ভিলেজার ও হেডম্যানদের ক্ষেত্র বিশেষে ১৫-৫০ হাজার টাকা হারে দিলে সমস্যা হয় না। কেউ নতুন ঘর করলেও ওদের টাকা দিতে হয়, অন্যথায় ভেঙ্গে দেয়।
স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখানে এক সময়ে বিস্তৃন্ন প্রকৃতিক বনাঞ্চল বর্তমানে ধ্বংসের মুখোমুখি। হেডম্যান, ভিলেজার, বনকর্মী, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা একেকার হয়ে এ লুটতরাজে মেতে উঠেছে। সামাজিক বনায়ন অন্যান্য বনের অবশিষ্ট অল্প-স্বল্প গাছ ধ্বংস করতে ওই মহল ৭টি অবৈধ করাত কল বসিয়ে বেআইনী ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জনবল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অভাব থাকায় বনকর্মীরা বনদস্যু, জবর দখলকারীদের কাছ থেকে নগদ যা পাচ্ছে হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় নিরীহ লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে যায়।
অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নানের সাথে এব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিক যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া রেঞ্জ অফিসার মনিরুল আলম দুরে আছি পরে কথা হবে বলে সংযোগ কেটে দেন।