উখিয়ায় এখন ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে এসব মরণঘাতক ইয়াবা। আর এতে করে এলাকার লোকজন উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এসব ইয়াবা আটক করে তা আবার সোর্সের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। এমনকি আটককৃত ইয়াবা থানা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ারও অসংখ্য ঘটনার নজির রয়েছে। এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ইয়াবা চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্টরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। উখিয়ার সচেতন নাগরিক পরিষদের সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, পুলিশের সাথে ইয়াবা চোরাচালানিদের রয়েছে গলায় গলায় ভাব। পুলিশকে হাতে নিয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে ইয়াবার চালান পাচার করে দিচ্ছে। নতুন করে সড়কপথের পরিবর্তে ইয়াবা চোরাচালানিরা এখন সাগর চ্যানেল ব্যবহার করছে। যা ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া চালান দেখলেই সহজেই অনুমান করা যায়। তার মতে, কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরভিত্তিক ২০ সিন্ডিকেট চোরাচালানি সক্রিয় থাকায় তা কোনো মতেই রোধ করা যাচ্ছে না। শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন অলিগলিতে রয়েছে এসব ইয়াবা বেচাকেনার হাট।
এছাড়া শুধুমাত্র চট্টগ্রাম, কক্সবাজার-টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম, কুতুপালং বিভিন্ন চোরাই পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে কক্সবাজার জেলার পুলিশ প্রসাশন রীতিমতো অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মায়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৩৭টি কারখানায় ইয়াবা তৈরি করে তা রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে চোরাচালানিদের মাধ্যমে অনায়সে দেশে প্রবেশ করছে। ফলে প্রতিনিয়তই দেশের কোথাও না কোথাও ইয়াবার চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। এক শ্রেণীর মুখোশধারী চিহ্নিত ইয়াবা চোরাচালানি রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় চরম ঝুঁকি নিয়ে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল (বামাকা) উখিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম সেলিম জানান, ইয়াবা একটি মরণ ঘাতক।
এছাড়া কক্সবাজারের শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক এলাকাসহ পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা। উখিয়া- টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে প্রতিদিনই এদেশে ঢুকছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান। প্রায় সময় ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটলেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। উখিয়া, টেকনাফ উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নারী-পুরুষ, রোহিঙ্গা যুবক, যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সক্রিয় হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি নুর মোহাম্মদ মিজানসহ তার সিন্ডিকেটের ৭ সদস্য। যাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। উপজেলা যুবলীগ নেতা মাসুদ আমিন শাকিল জানান, কারা ইয়াবা চোরাচালানি তার একটি তালিকা পুলিশের হাতে রয়েছে। পুলিশ চাইলেই একদিনেই সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সবাইকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তাহলে ইয়াবা পাচার বন্ধ হবে না।
জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফ উপজেলার অন্ততপক্ষে অর্ধশতাধিক ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেশের বিভিন্নস্থানে ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে। এসব আটকের ঘটনা ঘটলেও প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই নির্দিষ্ট গন্তব্য ইয়াবা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা আটকের সময় মাঝে মধ্যে পাচারকারী আটক হলেও এর সাথে জড়িত রাঘববোয়াল বা গড়ফাদাররা আটক না হওয়ায় ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।