জেলায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উখিয়া উপজেলা সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। জেলায় গড় পাশের হার ৯৬.০৬ শতাংশ হলেও উখিয়ায় এ হার ৯০.৪ শতাংশ। ৫বছরের রস্ক প্রকল্পে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। উখিয়ায় প্রাথমিকে ফলাফল বিপর্যয়ে পিছনে রস্ক প্রকল্পের আনন্দ স্কুল গুলোকে দায়ী করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে উখিয়ায় সমাপনী পরীক্ষার্থী ছিল ৭ হাজার ৬৩ জন। তম্মধ্যে অংশগ্রহণ করে ৬ হাজার ১৪ জন। পাশ করেছে ৪ হাজার ৮৫৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮৬ জন। উখিয়া শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ায় ৭৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে সমাপনি পরীক্ষায় অংশ নেন ৬০১৪ জন পরিক্ষার্থী। ঝড়ে পড়া রোধ করন রস্ক প্রকল্পের ১১১টি আনন্দ স্কুল থেকে ২০১৪ সালে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা থেকে ৮২৮জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। ইবতেদায়ী থেকে পাশ করেছে ৭৩৩জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২জন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশ করেছে ৪০৭৬ জন। আর আনন্দ স্কুলে পাশ করেছে ৭৯৯জন। রস্কের আনন্দ স্কুল গুলো নিয়ে প্রথম থেকেই উখিয়ায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সচেতন অভিভাবক মহলের ব্যপক অভিযোগ উঠে। স্থানীয় লোক জন ও এসব শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছিল। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা সমূহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের সাথে আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থীদের একীভূত ভাবে পরীক্ষা গ্রহনকে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা উখিয়া শাখার সভাপতি ও পাতাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উখিয়া সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ, গয়ালমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান সহ প্রায় সকল শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানহীন, অস্তিস্ত¡হীন আনন্দ স্কুল গুলোর পরীক্ষার্থীদের অনেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়, মাদ্রাসার নি¤œ বা উচু শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী, অনেকেউ কেউ কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্র। সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসব অনিয়ম জানার পরও অন্ধের মত চেয়ে দেখে যাওয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না। আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে এধরনের আশংকার কথা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এসব অনিয়ম রোধে কোন নিদের্শনা না দেওয়ায় ফলাফল বিপর্যয়ের আশংকা করা হয়েছিল বলে তারা জানান। তাদের দাবী অবশেষে তাই হয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে রস্ক প্রকেল্পর আওতায় প্রাথমিক শিক্ষার মাঝ পথ থেকে ঝরে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে উখিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা ১৪৫টি আনন্দ স্কুল। শর্তানুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে সর্ব নি¤œ ৩০জন থেকে সর্বোচ্চ ৩৫জন ছাত্র-ছাত্রী বাধ্যতামূলক করা হয়। ৫ বছরের ব্যবধানে ঝড়ে পড়াদের রোধ করা তো যায়নি বরং সাড়ে ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনি পরীক্ষায় অবশেষে অংশ নেন সাড়ে ১৪শ এর মত পরীক্ষার্থী। এ সময়ে ১৪৫টি আনন্দ স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েছে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী, ছাত্র-ছাত্রীর সংকট, অনিয়ম-দুর্নীতি, তদারকির অভাবে বন্ধ হয়েছে ৩৪টি আনন্দ স্কুল। এ ৫ বছরে স্কুল এর ঘর নির্মান, ঘর ভাড়া, উপকরন, বই, শিক্ষার্থীদের পোশাক, উপবৃত্তি প্রদান সহ আনুসাঙ্গিক খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার মত ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে। এত কিছুর পর ও কাংখিত ফল আসেনি বরং এতগুলো টাকা অনর্থক নষ্ট হলো বিধায় রস্ক প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের কর্মকান্ডের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলে। উপর মহল থেকে রস্ক প্রকল্পের আনন্দ স্কুল গুলোর চাপিয়ে দেওয়া বিধায় স্থানীয় প্রশাসন বা শিক্ষা অফিসের তেমন কিছু করার নেই মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও এসবের তদন্ত দাবি করেন। উখিয়া ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম ভূঞা আনন্দ স্কুলের কারণে এখানে প্রাথমিক সমাপনিতে ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে বলে স্বীকার করে বলেন, এ গুলো না হলে উখিয়ায় পাশে হার প্রায় শত ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।