দেশের বিভিন্ন হ্যাচারিতে চালানের উদ্দেশ্যে উখিয়ার উপকূলে পোনা নিধন করা হচ্ছে নির্বিচারে। স’ানীয় কতিপয় পোনা ব্যবসায়ীর অর্থায়নে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রায় শতাধিক পোনা শিকারি নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা শিকার করছে। ফলে প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা।
জেলেদের দাবি, পোনা মারা পড়ার কারণে সাগরে মাছের বংশবিস্তারে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, উপকূলের সোনারপাড়া থেকে মনখালী পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা নাগরিক ঝাউ বাগানের আনাচে-কানাচে ঝুপড়ি বেঁধে অবৈধ বসবাস করছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এসব রোহিঙ্গারা ঝাউগাছ কেটে বিক্রি করছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলে কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা ধরে বিক্রি করছে।
গত মঙ্গলবার সকালে উপকূলের মাদারবনিয়া ঘুরে দেখা যায়, সাগর তীরে অসংখ্য বাঁশ ও গাছের খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে স’ানীয় ফিশিং বোটের শ্রমিক আশরাফ আলী (রোহিঙ্গা) জানান, এসব খুঁটির সাথে কারেন্ট জাল বেঁধে রাখা হয়। জোয়ার-ভাটা হলে জালে আটকা পড়া চিংড়ি পোনাগুলো পৃথক করে বাদ বাকি মাছের পোনাগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
এ সময় কারেন্ট জাল নিয়ে উপকূলে ঘুরাঘুরি করছে এমন কয়েকজন ছেলেমেয়ে জানায়, তারা মায়ানমার থেকে এসে ঝাউবাগানে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। পোনা ধরে তারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করার কথা অকপটে শিকার করে বলেন, তাদের মত আরও শতাধিক ছেলেমেয়ে সাগরে নিয়মিত পোনা ধরে।
৭ বছর বয়সী আছিয়া খাতুন জানায়, তারা ভাইবোন ৩ জনই দৈনিক ৪/৫ শত টাকা পোনা বিক্রি করে পায়। তা দিয়ে তাদের সংসার চলে।
পাশেই ঝাউগাছের নিচে অপেক্ষমান পাতিল নিয়ে বসা দুজন পোনা ব্যবসায়ী রুস্তম আলী ও ইয়াকুব আলী জানান, তারা একেকটি চিংড়ি পোনা আট আনা দরে ক্রয় করে ৭৫ পয়সায় আড়তে বিক্রি করেন।
সোনারপাড়ার পোনার আড়তদার মমতাজ উদ্দিন জানায়, এসব পোনা সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স’ানে চালান হয়ে থাকে। কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের পোনা ধরার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মৎস্য অফিসার কেএম শাহরিয়ার নজরুল জানান, কোস্টগার্ডের সহায়তায় উপজেলা মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় কয়েক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান চালাতে না পারলেও উখিয়ার উপকূলে কারেন্ট জাল ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।