উখিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর বশির আহম্মদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে সীমাহীন গতিতে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত থেকে উখিয়া উপজেলার সহ¯্রাধিক শিক্ষকের জীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে। এ অফিস সহকারীর হাতে জিন্মি হয়ে আছে পুরো শিক্ষক সমাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজ বশিরের হাত থেকে কোনভাবেই রেহায় পাচ্ছিনা। বশির সরকারী নিয়ম মতো অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োজিত থাকলেও তার কোন রকম কম্পিউটারের আক্ষরিক জ্ঞান না থাকায় আরেকজন বেসরকারীভাবে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিতে হয়েছে। আর ওই কম্পিউটার অপারেটরের বেতন দিতে হয় উপজেলার ৭৪ টি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ টাকা হারে মাসিক চাঁদা তুলে। সেখান থেকেও ওই অপারেটরকে ২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে বাকী ১৭০০ টাকা বশিরের পকেটে যায়। এমনকি অফিসের কাজে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিলেও তা টাকা ছাড়া জমা নেয়া হয় না। টাকা ছাড়া কোন কাজই করেনা বশির। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বশির ঘুষ বাণিজ্যের নিয়ম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একের পর এক পাল্টিয়ে এখন টাইম স্কেল জমা দেওয়ার সময় ১০০০ টাকা ও ইবিক্রস বাবদ ৭০০ টাকা করে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সম্প্রতি জাতীয় করণ শিক্ষকদের উন্নীত করণে ইচ্ছাকৃতভাবে বশির ভূল করে ৫০ জন শিক্ষক থেকে ১০০০ টাকা করে পুনরায় ঘুষ দিয়ে তাদের স্ব-স্ব ফাইলের কাজ করতে হয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য করছে শিক্ষকদের বদলিতে। কিছুদিন আগে জালিয়া পালং ইউনিয়নের নিদানিয়া ও মনখালী থেকে দুইজন শিক্ষককে বদলি করার জন্য ৬০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এমনকি যারা নতুন নিয়োগ পেয়েছে তাদের থেকেও একইভাবে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এই বশির মহেশখালী শিক্ষা অফিসে থাকাকালীন সময়ে খোদ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে হত্যা করে। পরবর্তীতে মামলায় কৌশলে টাকার বিনিময়ে চার্জশীট থেকে বাদ পড়ে যায়। অন্যদিকে তিনি কুতুপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার নামে স্থানীয় দিনমজুর মামুনের কাছ থেকেও ১ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। আর এসব অনিয়ম দুর্নীতি করেও কিভাবে তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন তাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষকদের মাঝে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ওই দুর্নীতিবাজ অফিস সহকারী বশিরের নেপথ্যে উখিয়া সরকারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বঘোষিত শিক্ষক নেতা বদিউর রহমান মূল ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে। তাদের নেতৃত্বে একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। আর ওই সিন্ডিকেটের কাছেই জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ শিক্ষকরা। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। আর তাদের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী শিক্ষকসহ একাধিক লোকজন জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন। উখিয়ার স্বপন বড়ুয়া, বাদল, নুরুল কবির, নুর আহম্মদের স্বাক্ষরিত এই অভিযোগ পত্রে বশিরের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন। সর্বশেষ উখিয়ার পাতাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ শাহ আলম ও দরগাহ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলামের পেনশনের ফাইল আটকে রেখে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই দুই শিক্ষক। তারা বলেন, আমরা শিক্ষকতার জীবন শেষ করা সত্বেও আজ পর্যন্ত আমাদের অধিকারটা পাচ্ছি না, এই বশিরের কারণে। এই দুর্নীতিবাজ বশিরের বিরুদ্ধে গেল বছরে বেশ কিছুদিন বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ হলে কিছুটা সাধু সাজার চেষ্টা করে দুর্নীতিবাজ বশির। আমরা এতোদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু বশিরের অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারছি না। যার কারণে সংবাদমাধ্যমে কথা বলছি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে বশির আহম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কেমন লোক তা আপনারা শিক্ষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা মূলত: না জেনেই দিয়েছে। আর এটি সম্পূর্ণ ভূল তথ্য।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এখন ইউএনও স্যারের সাথে ব্যস্ত আছি, আপনারা আমাদের অফিসে এসে যোগাযোগ করতে পারেন।’