উখিয়া উপজেলা সাব রেজিষ্টার অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি দপ্তরটি ব্যবসায়িক বা দালালি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একই সাথে অনিয়ম-দূর্নীতি আকড়াও বলা যায় এটিকে। সরকারী তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বহিরাগত এক ডজন অতিরিক্ত লোকজন দিয়ে অফিসের কার্যক্রম সামাল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্টানটির বিরুদ্ধে। এসব বহিরাগত লোকজন এক প্রকার সাব রেজিষ্টার অফিসে দালাল হিসেবে চিহ্নিত। আবার এসব চিহ্নিত দালালদের মাধ্যমে সাব রেজিষ্টার থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার, উম্মেদার পর্যন্ত হাজার হাজার ঘুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যদিও সাব রেজিষ্টার অফিসের দূর্নীতির ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। উক্ত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চুক্তি ভিত্তিক জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কথা মত দলিল রেজিষ্ট্রি, সম্পাদন ও অন্যান্য ভেজাল জায়গা-জমির বৈধতা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উখিয়া সাব রেজিঃ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি যেন দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ঘুষ ছাড়া এখানে কোন কাজ হয় না। দূর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্য ও জমির দালালদের উৎপীড়নে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছে জনগন। গতকাল সোমবার সকালে সাব-রেজিষ্টি অফিসে রেজিষ্ট্রি করতে আসা ডেইল পাড়া গ্রামের মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে কবির আহামদ অভিযোগ করে জানান, সকালে তাদের রেজিষ্টি হওয়ার কথা। একজন মুন্সিকে রেজিষ্ট্রি করতে কন্টাক দেওযা হয়েছে। কিন্ত সাব-রেজিষ্ট্রার না আসার কারণে রেজিষ্ট্রি করা যাচ্ছেনা। এমন গটনা প্রতিদিনের। এদিকে ইনানী মৌজার জমি রেজিষ্টি বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও গোপনে কন্টাকের মাধ্যমে সাব রেজিষ্টি অফিসের কর্মকর্তারা ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে নিজেদের তৈরীকৃত দূর্নীতির খতিয়ানের উপর ভিত্তি করে ওই মোক্ষম সুযোগকে পুরোপুরি কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পর্যটন নগরী ইনানী এলাকায় সৈকত ঘেষাঁ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন জমির অধিকাংশের মালিক এখন দেশের রাঘব বোয়াল ও শিল্পপতিরা। এখন চলছে তাদের মধ্যে হাতবদল। আর এ হাতবদলের সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সাব রেজিষ্টি অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা। এতে ত্রেতা বিক্রেতা ও দালালরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিরবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাব-রেজিষ্টার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে ইনানী মৌজার জমির মূল্য হচ্ছে ৩১ লক্ষ টাকা। অথচ বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে কানি প্রতি ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আর এ দলিল সম্পাদনের জন্য জমির মূল্যের উপর ভিটা-বাড়ী ১ লাখ টাকায় ১০ হাজার টাকা এবং বাড়ী ব্যতীত নাল সহ অন্যান জমি ১ লাখ টাকায় ৯ হাজার টাকা আদায় করার সরকারী নিয়ম থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, উখিয়া সাব রেজিষ্টার নজরুল ইসলাম সরকার , প্রধান সহকারী সোলতান আহমদ, সহকারী কেরানী সজীব দে, অতিরিক্ত মুহুরী ছিদ্দিক আহমদ সহ ঝাড়–দার, উম্মেদার ও সাব রেজিষ্টার অফিসের আন-লিষ্ট্যাট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাব রেজিষ্টার অফিসকে দূর্নীতির শীর্ষে নিয়ে গেছেন। এদের রয়েছে একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটটি একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছে। উখিয়া সাব রেজিষ্টি অফিসের দুনর্িিতর কিছু নমুনাও পাওয়া গেছে, যেমন জমির মূল পরচা সেটেলম্যান্ট অফিসের মাধ্যমে না হয়ে যদি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে নেওয়া হয় তাহলে ওই দলিল অনুমোদন করতে শুধু পরচার কারনে ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। সরকারী নিয়ম মতে জন্ম নিবন্ধন কার্ড না থাকলে দলিল সম্পাদন করা নিষিদ্ধ হলেও সাব রেজিষ্টার নজরুল ইসলাম সরকার ও কেরানী সজীব দে মিলে নিবন্ধনের তোয়াক্কা না করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দলিল সম্পাদন করেন। এছাড়া দলিল লিখকদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের কোন বিধান বা নিয়ম নীতি না থাকলেও সাব রেজিষ্টার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মকচারীরা দলিলের প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। আরও জানা যায়, সপ্তাহে ৫ দিন কর্ম দিবস হলেও সাব রেজিষ্টার নজরুল ইসলাম সরকার ২ দিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন। তাও আবার আসেন দুপুরের পর। যতক্ষন তিনি অফিসে থাকেন ততক্ষন ভিতর থেকে ফুঁক দিয়ে দরজাটি বন্ধ করে রাখা হয়। তারপর রুমের ভিতরে দলিলের কাজ সম্পাদন করে থাকে বলে জানা যায়।
এদিকে বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানায়, পার্টি বা সিন্ডিকেটের সাথে সরাসরি কথা বলে প্রথমে ঘূষের টাকা বুঝে নেন সহকারী কেরানী সজীব দে। এর পর তিনি ওই টাকা অফিস সহকারী অতিরিক্ত মুহুরী ছিদ্দিক আহমদের কাছে হস্তান্তর করেন। আবার ছিদ্দিক আহমদ ওই টাকা জমা রাখে প্রধান সহকারী সোলতান আহামদের কাছে। পরবর্তীতে সোলতান আহমদ গোপন তালিকা মতে কাকে কত টাকা দিতে হয় তা যথাযথ ভাবে ভাগ বন্টন করে থাকে বলে জানা যায়। এই হল উখিয়া সাব রেজিষ্টার অফিসের প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে স্বীয় উদ্ভাবনীয় দূর্নীতির চিত্র। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান হলেও হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে সাব রেজিষ্টার নজরুল ইসলাম সরকারের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।