বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দরিদ্র দেশ থেকে ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার হার বাড়ছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা কমছে। মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। এমনি আরো অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুতগতিতে উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে একসময় যারা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বাংলাদেশকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছে, তারাই আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এই অর্জন আমাদের গর্বিত করে, সম্মানিত করে। অবশ্য তার বিপরীতে কিছু আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। যেমন—দরিদ্র দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা খুব কম বা নামমাত্র সুদে ঋণ দিত, এত দিন বাংলাদেশও তা পেয়েছে। এখন বাংলাদেশকে একই ঋণ নিতে হবে কিছুটা অতিরিক্ত সুদে। আগে দারিদ্র্য বিমোচনসহ নানা রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিওগুলোকে যেসব সাহায্য দেওয়া হতো, তা এখন কমে যাবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেত, তা-ও কিছু পরিমাণে কমে যাবে। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা আমরা কিভাবে মোকাবিলা করব, তার জন্য পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সেভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার জন্যও কাজ করে যেতে হবে।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার পেছনে মানুষের মনে প্রধান যে আশা ছিল তা হলো, দেশ এগিয়ে যাবে, মানুষের দারিদ্র্য ঘুচবে এবং বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা হবে। বলা যায়, আমরা সঠিক লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে উন্নত রাষ্ট্র হওয়া। সেই লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যেতে হবে। চলার পথে অনেক ঝুঁকি থাকবে, বাধাবিঘ্ন আসবে—সেগুলো যথাযথ উপায়ে মোকাবিলা করতে হবে। বিদেশি ঋণের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বাড়াতে হবে। আর তা করার জন্য শুল্ক ও কর আহরণ আরো জোরদার ও গতিশীল করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাইজ করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। জাতীয় সম্পদের অপচয় কমাতে হবে। সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। মানুষের কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের জন্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। সে জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়াতে হবে। বহুমুখী শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর এসবই সম্ভব হবে যদি সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাই। সেদিক থেকে বলা যায়, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কৌশল সঠিক পথেই আছে। এখন প্রয়োজন দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অবশ্যই অভীষ্ট লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাবে।