রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া : প্রাকৃতিক দুর্যোগে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকায় বসতবাসরত মানুষের কপাল পুড়েছে। ভূগর্ভস’ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে যাওয়ার দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরো চাষ। বিপন্ন হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ঝাউ বাগান।
গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই উপকূলের প্রায় স’ানে ভূগর্ভস’ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে যাওয়ার ফলে সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি নদ-নদী ও সাগরে বেড়ে গেছে লবণাক্ততার মাত্রা।
খাল-বিল, ছরা, নালা, নর্দমা দিয়ে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ফসলসহ কৃষিজাত পণ্য। গ্রামবাসীর দাবি, লবণাক্ততার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে গোখাদ্য সংকটে পড়ে গৃহপালিত গবাদি পশুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে অত্যাধিক হারে।
স’ানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম জানান, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, রামুর আংশিক সহ উখিয়া ও টেকনাফে লবণাক্ত পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ তিন উপজেলার কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি এসব এলাকায় স’ায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
উপকূলীয় গ্রাম মাদারবনিয়ার কৃষক শামশুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে আগের মত ফসল ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে না। যে কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব, অনটনে দিনযাপন করতে হচ্ছে। মনখালী উপকুলের বনরক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, লবণাক্ততা ও আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারণে উপকূলের সবুজ বেষ্টনীসহ অর্থকরী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
চেংছরী গ্রামের কৃষক আবুল শামাসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে ভূগর্ভস’ পানির স্তর গভীর চলে যাওয়ার কারণে এখানে হাতিঘোনা যে কয়েকটি নলকূপ রয়েছে তাতেও পানি উঠছে না। সর্বত্র খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। স’ানীয় ইউপি সদস্য সোলতান আহমদ মেম্বার জানান, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের জীবন জীবিকা সহ উৎপাদনমুখী যাবতীয় কৃষিজাত পণ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে।
স’ানীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, অর্থকরী ফসলের মধ্যে পান, সুপারি, নারিকেল ও তরমুজ উৎপাদনের জন্য উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে এলাকার অধিকাংশ পরিবারে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আর কয়েক দিন পর এখানে খাবার পানি সংকটের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন শীল জানান, লবণাক্তত পানি কৃষি ও ফসলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যেখানে লবণাক্ত পানি বিদ্যমান রয়েছে, সেখানে কৃষিজাত পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন কোনভাবেই সম্ভব নয়।