অমর একুশে বাঙালি জাতির এক বড় অর্জন। ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। দিবসটিকে ঘিরে নানা আয়োজনের মধ্যে একুশের গৌরবগাথা ফুটে ওঠে পোশাকেও।
পোশাকের বিভিন্ন দোকান ও বুটিকগুলো মহান একুশকে সামনে রেখে তৈরি করছে নতুন নতুন নকশার রকমারি পোশাক। এসব পোশাকে ব্যবহৃত রং, কাপড়, নকশা ভাষা আন্দোলনের মহিমায় উজ্জ্বল। পোশাকে যুক্ত হয়েছে একুশের গান, কবিতা, স্লোগান ও বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন পঙ্ক্তিমালা। এসব পোশাকে ফুটে উঠেছে বাঙালির নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ছাড়া শহীদ মিনার, মানচিত্র, পতাকাসহ একুশের বিভিন্ন চিত্রের নান্দনিক প্রকাশ ঘটেছে এবারের পোশাকে।
রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট ও বসুন্ধরা সিটিরফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল, দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাকে একুশের চেতনায় উজ্জীবিত নানা ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছে। লাল, সাদা, কালো রং দিয়ে তৈরি হয়েছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, কামিজ, টিশার্ট এবং বিভিন্ন ধরনের শিশুদের পোশাক। কিছু পোশাকের বৈচিত্রময় বাংলা ভাষার বিভিন্ন বর্ণ দিয়ে ছাপ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লেখা হয়েছে—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’।
ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান অনেক দিন ধরেই বাংলা বর্ণমালার ব্যবহারে পোশাক তৈরি করছেন। তিনি জানান, এটা কেবল তাঁর পোশাকের ব্যবসাই নয়, এটি একটি আন্দোলনও। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি যেহেতু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তাই এই দিনটিকে বিশ্বের মানুষের সামনে আরও ফুটিয়ে তুলতে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। তিনি শাড়ি ও টিশার্টে বর্ণমালার ব্যবহার করে আসছেন। এই দিনটি উপলক্ষে আরও বেশি করে স্মারক তৈরির প্রতি জোর দিলেন তিনি।
ফ্যাশন হাউস সাদাকালো সব সময় তাদের পোশাকে সাদা-কালো রং ব্যবহার করে পোশাক তৈরি করে আসছে। দেশিদশে ফ্যাশন হাউসটির ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, একুশের পোশাকে বিশেষ আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছে সাদাকালো। এখানে পুরো পরিবারের পোশাকের প্যাকেজ আছে। পরিবারের ছোট-বড় সবার জন্য বিভিন্ন নকশার পোশাক রয়েছে। এ ছাড়া বাবা-ছেলে এবং মা-মেয়ের জন্য একই নকশার পোশাকও রয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে এসেছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তানজিমা ইসলাম। তিনি জানান, গত কয়েক দিন কাজের চাপ থাকায় মার্কেটে আসতে পারেননি। আজ ছুটির দিন বলে সপরিবারে এসেছেন। স্বামী, ছেলেমেয়ের জন্য একুশের পোশাক কিনছেন। তবে পোশাক পরার মধ্যে যেন সঠিক ইতিহাস, গৌরব, শ্রদ্ধা চাপা পড়ে না যায়, সেদিকেও গুরুত্ব দিলেন।