এন্টি স্কিমিং ডিভাইস থাকলে ব্যাংকের বুথগুলোয় ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হতো না বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও পরামর্শ দেন তারা। এদিকে ইউসিবি, ইবিএল ও সিটি ব্যাংকের ছয়টি বুথে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটিকে শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। শিগগিরই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এটিএম বুথগুলোয় স্কিমিং ডিভাইস বসানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকজনও জড়িত থাকতে পারেন। তবে, সর্বশেষ ঘটনায় এর সম্ভাবনা কম বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন হলেও অন্যান্য অনেক দেশে স্কিমিংয়ের বিষয়টি পুরনো। প্রায় আড়াই বছর আগে এটিএম লেনদেন নিরাপদ রাখার জন্য সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু সেটাও সঠিকভাবে আমলে নেয়নি ব্যাংকগুলো। এছাড়া স্কিমিংয়ের বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানা থাকলেও কেন তারা এর প্রতিরোধে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করেননি সেটাই এখন রহস্যের বিষয়। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তদন্ত শেষে সবকিছুই খোলাসা হয়ে যাবে বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্ট তানভীর হাসান জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জালিয়াতির বিষয়টি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট লোক ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এরপর তারা কার্ড জালিয়াত চক্রেকে শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন।
জোহা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে হয়তো ব্যাংকের লোকজন জড়িত নেই। কিন্তু ঘটনার পরপরই বিষয়টি বিদেশি ক্রিমিনালরা করেছে বলে একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেটাও রহস্যজনক। দেশীয় চক্র জড়িত না থাকলে, বিদেশি চক্রের দ্বারা এমন জালিয়াতি সম্ভব নয়। জালিয়াতদের শনাক্ত করতে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে বলে জানান তিনি।
প্রযুক্তি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন সুমন আহমেদ সাবির। এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতির ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করেছে। এটিএম মেশিনে কার্ড রিডারের কাছাকাছি কোনও একটি স্থানে এই ডিভাইসটি বসিয়ে থাকে দুর্বৃত্তরা। তখন কোনও কার্ড মেশিনে ঢোকানো হলে তার ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে গ্রাহকের সব তথ্য কপি হয়ে যায় ওই ডিভাইসে। পরে ডিভাইস থেকে পাওয়া তথ্য একই ধরনের ধরনের আরেকটি কার্ডে দুর্বৃত্তরা ক্লোনিং করে ফেলেন। একইসঙ্গে তারা গ্রাহকের পিন নম্বরটি পাওয়ার জন্যেও ক্ষুদ্র ক্যামেরা ডিভাইস ব্যবহার করেন।
প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির আরও বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের জালিয়াতি নতুন হলেও অন্য অনেক দেশেই এটি পুরানো বিষয়। এ ধরনের জালিয়াতির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংকের লোকজন জড়িত থাকেন। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এন্টি স্কিমিং ডিভাইস এটিএম বুথগুলোয় বসিয়েছে। দ্রুত এমন জালিয়াতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ব্যাংকগুলোর। এরপরও যে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কেউ জালিয়াতি হবে না, এমনটি বলা যায় না। তবে এসব ক্ষেত্রে সকলেরই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত।
এসব ডিভাইস কোথায় পাওয়া যায় জানতে চাইলে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, এগুলো সাধারণতা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। যারা এসব জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তাদেরই একটি চক্রএগুলো তৈরি করে। তবে সেটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যে তৈরি করা হচ্ছে না, তাও বলা যাবে না।
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারাও ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড জালিয়াতদের ধরতে কাজ শুরু করেছেন। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে তারা পৌঁছাতে পারেননি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হয়েছে, সেসব কার্ড বন্ধ করে নতুন করে গ্রাহকদের কার্ড দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন, নিয়মিত ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও এটিএম বুথে যেন কোনওভাবে কেউ কোনও যন্ত্র কেউ বসাতে না পারেন, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।