জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনৈক্য স্পষ্ট হচ্ছে। জোটটির কর্মসূচি বা বৈঠকে যেতে চান না বিএনপির নেতারা। জোটের কর্মসূচিতে যেতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনীহা দেখা দিয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিএনপির সাড়া না পাওয়ায় আজ মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিত করেছে ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানানো হয়।
ঐক্যফ্রন্টের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নিজ আইনি চেম্বারে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের এক শরিক দলের শীর্ষনেতা আলাপকালে বিএনপির আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ড. কামাল তার কাছে জানতে চান জনসম্পৃক্ত বহু ইস্যু থাকার পরও ঐক্যফ্রন্ট কেন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। জবাবে ওই নেতা বলেন, এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানা খুবই জরুরি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ডাকলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া আর কেউ আসেন না।
বিএনপির মনোভাব জানার জন্য দু-একদিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে জোটটি মাঠে নামতে পারবে কিনা। এতে বিএনপির সাড়া না পেলে ঐক্যফ্রন্টের বাকি চার দল গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য মিলে জোটের ব্যানারে ছোট আকারে হলেও মাঠে কর্মসূচি পালনে একমত দলগুলোর শীর্ষনেতারা।
সূত্রমতে, রাজনৈতিক নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে বর্তমানে বিএনপি ও তাদের মিত্র ঐক্যফ্রন্টে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ায় বিএনপির ভেতরেই বইছে ঝড়। শপথগ্রহণ নিয়ে গণফোরামেও প্রকাশ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার দীর্ঘ ৮ বছর পর দলটির কেন্দ্রীয় বিশেষ কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খানের উপস্থিতি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে নেতাদের অনেকে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথের পেছনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ‘নীরব ইশারা’ কাজ করেছে। তার মতের বাইরে এ দুজন শপথ নেননি। বিষয়টি নিয়ে ড. কামালের আচরণ পছন্দ হয়নি বিএনপি নেতাদের। একই কারণে গতকাল বিএনপির ৪ সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলের নেতারাও বিএনপির ওপর এক হাত নিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না বিএনপি।
ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা মনে করেন, জোটের প্রধান দল বিএনপিতে সংকট এখন বেশি। কারণ তাদের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। এ জন্য দলের একে অপরকে দোষারোপ করছেন। কারও কারও মতে, দলটির নীতিনির্ধারকরা আগে থেকে সক্রিয় হলে শপথের বিষয়টি ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু কারও মধ্যে আগে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির কয়েকজন নেতা ঐক্যফ্রন্টের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনেন। বিষয়টি এখন রীতিমতো রূপ নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ভাঙার উসকানিতে।
One thought on "ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে অনীহা বিএনপির"
Comments are closed.