কক্সবাজার আগত পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আর্কষণীয় বার্মিজ মার্কেট তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারাচ্ছে। রাখাইন হস্তশিল্পের নানা পন্য, মিয়ানমারের পণ্যের কারণে এর জনপ্রিয়তা বাড়লেও এখন ওই সব পন্য নেই বললে চলছে। শিল্পায়নের এ যুগে মিয়ানমারের পণ্যের চেয়ে নানা দেশীয় পণ্য, ভেজাল পণ্য গ্রাস করেছে এর নিজস্ব ঐতিহ্য। যা নিয়ে স্বয়ং চিন্তিত ওই বার্মিজ মার্কেটের প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও।
বার্মিজ মার্কেট কর্মকর্তা বয়স্ক রাখাইন, প্রধান ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকায় বার্মিজ মার্কেটের সূচনা ১৯৬২ সালে। টেকপাড়া এলাকার উনাং রাখাইন নামের এক নারীর নিজস্ব বাড়ি ছিল টেকপাড়া বার্মিজ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। ওই নারী তার নিজের বাড়ির সামনে ছোট পরিসরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাখাইন হস্তশিল্পের কিছু মালামাল বিক্রি করতে শুরু করে। যেখানে ছিল চাদর, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, চুরুট (সিগারেট), পুরুষদের লুঙ্গি, নারীদের থামি আর টুকিটাকি জিনিস পত্র। কক্সবাজার বেড়াতে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকরা ওখানে ভিড় করতেন আর কিনতেন এসব পন্য। তখন থেকেই শুরু হয় বার্মিজ মার্কেটের যাত্রা। পর্যটকদের চাহিদার কারণে ওই নারী প্রথমে “কক্সবাজার কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ” নামে বাণিজ্যিকভাবে স্টোর তৈরী করার। তার দেখা-দেখিতে একে একে তৈরী হতে থাকে টিন টিন বার্মিজ স্টোর, রাখাইন স্টোর, উমে স্টোর, নূরানী এম্পোরিয়াম, বিবি ফ্যাশন ডায়মন্ড স্টোর সহ নানা দোকান। সূচনার দিকে ওই মার্কেটে ২০ টির কম দোকান থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ৩ শতাধিক।
বার্মিজ মার্কেটের ব্যবসায়ী রাখাইন নারী উছেং রাখাইন জানান, শুরুতে এসব দোকানে বার্মিজ কোন পণ্য ছিল না। পরবর্তীতে বার্মিজ পণ্য লুঙ্গি, থামি, সেন্ডেল, আচার, বাম জাতীয় ভেসজ, স্নেখা (এক প্রকার প্রসাধন), কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, চন্দন, পাখা, হরেক রকমের বার্মিজ আচার, হাতির দাঁতের তৈরী তৈজসপত্র, কানের দুল, চুড়ি, কুটির শিল্প, কাঠের ফ্রেম ও গহনা বাক্স ক্রেতা আনা হত। যা পর্যটকদের ব্যাপক আকর্ষণ করতো। তখন থেকে এসব মার্কেটের সব দোকান নারী দ্বারা পরিচালিত হত। কিন্তু বর্তমানে বার্মিজ পণ্য কমে গেছে। একই সঙ্গে হস্তশিল্পের কিছুই শূণ্যের টোকাই।
ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রিয়ং রাখাইন জানান, এখন সময় সব দোকান নারীরা পরিচালিত করলেও এখন অর্ধেক পুরুষ পরিচালিত। এতে নিজস্ব ঐতিহ্য হারাচ্ছে স্বাভাবিক। একই সঙ্গে বার্মিজ পণ্যের চেয়ে দেশীয় পন্য বেশি এসব মার্কেটে।
বার্মিজ মার্কেটে শুটকির দোকান মার্কেটের ঐতিহ্য হারানোর আরেক ধাপ বলে মন্তব্য করেছেন রাখাইন নারী থøাইলং রাখাইন।
পর্যটক ক্রেতা মাহফুজা খানম জানান, নামে বার্মিজ হলেও এখানে অনেক পণ্যই বাংলাদেশের তৈরী। তবে ক্রেতাদের ভালমতো দরদাম করে এসব পণ্য কেনা উচিত। এখানে এমন জিনিস আছে যা ঢাকা বা চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেটে আরও কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। বার্মিজ মার্কেটের সুনাম নষ্ট করতে এর চেয়ে বেশি উদাহরণ আর হতে পারে না।
অনলাইন ডেস্ক :