অবশেষে স্থায়ীভাবে গ্যাস পেতে যাচ্ছেন কক্সবাজারবাসী। মহেশখালীতে প্রস্তাবিত এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন হলেই স্থায়ীভাবে গ্যাসের দেখা পাবে কক্সবাজার। এ প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে এ মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর আমদানিকৃত অপরিশোধিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিশোধনের মাধ্যমে পাইপলাইনের সাহায্যে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতাসম্পন্ন। এতে পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন বিদ্যুেকন্দ্র এবং সার ও শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। গত ২৬ জানুয়ারি মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই এ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
পাইপলাইনটি স্থাপনে মহেশখালী দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৫ দশমিক ৯৪৩ একর, হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়া মৌজার ৬ দশমিক ৭৬৭ একর ও কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা মৌজার প্রায় চার একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পাইপলাইন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পাঁচ কোম্পানিকে। হোয়ানকের ধলঘাটপাড়া হয়ে পশ্চিমে ঘটিভাঙ্গা মৌজার ওপর দিয়ে সমুদ্রতীর থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে লাইনটির জিরো পয়েন্ট। এ ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছে দীপন গ্রুপ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অন্য গ্রুপগুলো হচ্ছে টেকনিক গ্রুপ, পিইএল, ম্যাকসুয়েল ও গ্যাসমিন।
স্থানীয় সূত্রমতে, মহেশখালী এলাকায় এখন ধান, পান ও লবণ
উত্পাদনের ভরা মৌসুম। তড়িঘড়ি করে ভূমি অধিগ্রহণ ও গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনকাজ একসঙ্গে শুরু হওয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এতে নির্মাণকারী ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে স্থানীয় চাষীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মহেশখালীর পুরো দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ফলে এলএনজি টার্মিনাল ও পাইপলাইন স্থাপনে ব্যবহূত ভারী মালপত্র পরিবহন বেশ কঠিন। এসব কারণে প্রকল্পকাজে বিলম্বের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ভৌগোলিক কারণে কক্সবাজারের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ কারণেই এখানে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মহেশখালীতে ধান, পান ও লবণচাষী এবং ঠিকাদারের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান এরই মধ্যে করা হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ। এছাড়া আছে আরো ৩০ হাজার সাধারণ গ্রাহক। তাই দেশের অন্য শহরের তুলনায় এখানে গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা কয়েক গুণ বেশি। ফলে এখানে গ্যাস সিলিন্ডারের সংকট প্রায়ই প্রকট হয়ে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে গ্যাস সিলিন্ডারের দামে। আর দাম বাড়ার প্রভাব সরাসরি পড়ে পর্যটক ও সাধারণ গ্রাহকদের ওপর। তবে মহেশখালীতে প্রস্তাবিত এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে কক্সবাজারবাসী ও পর্যটক।