ক্যালেন্ডার পাতা থেকে মুছে গেছে ২০১৫ সাল। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে কক্সবাজার জেলার উন্নয়নের বছর হিসেবে। কেননা ওই এক বছরেই জেলার উন্নয়নে গৃহিত হয় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।
২০১৫ সালের শুরুটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে। আর বছরের শেষেও তিনি কক্সবাজারবাসীকে উপহার হিসেবে দিলেন মেগাবীচ কার্ণিভাল।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত বছরের প্রথম মাসেই মহেশখালির মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ১২০০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ওই মাস থেকেই জমি অধিগ্রহন শুরু করে প্রশাসন। সেই শুরু কক্সবাজারের এগিয়ে যাওয়ার পাল্লা। এরপর আর পেছনে তাকানোর ফুসরৎ পায়নি কক্সবাজারবাসী। একের পর এক প্রধানমন্ত্রীর ক্যার্যালয় থেকে ঘোষণা আসে কক্সবাজারের উন্নয়ন । সর্বসাক’ল্যে কক্সবাজারের উন্নয়নে ৪০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিগত বছরের ১ মার্চ রামুতে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের শুভ উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রামুর ৩ টি ইউনিয়নে ১৭৮০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয় ওই সেনানিবাস। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ২ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে কক্সবাজারে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
২০১৫ সালেই কক্সবাজারকে সাজাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করে সরকার। জেলার অর্থনীতি, খেলাধূলা পর্যটন ও জীবানামানের উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সাজানো হয় এসব পদক্ষেপ। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রামু নির্মিত হয়সেনানিবাস, অর্থনৈতিকভাবে কক্সবাজারকে এগিয়ে নিতে নেওয়া হয়েছে ২৬ টি মেগা প্রকল্প, পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য গ্রহন করা হয়েছে হাজার কোটির টাকার প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নয়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি বাস্তুহারাদের জীবনামান উন্নয়নে খুরুশ্কুলে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প।
মহেশখালির মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সরকার মহেশখালির অমাবশ্যাখালী, পানিরছড়া, হরিয়ারছড়া, কালারমারছড়া, হেতালিয়া, ও হোয়ানকে এলএনজি ও কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়। বিগত বছরেই একই উপজেলার মাতারবাড়ির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমার্ণের সিদ্ধান্ত হয়। যার জমি গ্রহনের জন্য ইতিমধ্যেই ৬ ধারা নোটিশ প্রদান করা হয়।
পেকুয়া উপজেলায় করিয়ারদিয়ায় ১২০০ ওমেগাওয়াট কয়লা বিদ্যূৎ নির্মানের জন্য ১৫৬০ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব দিয়েছে একটি বেসরাকারি কোম্পানি। যার প্রস্তবনা যাচাই -বাছাই চলছে। মহেশখালি ও পেকুয়া উপজেলার ১৩ টি মৌজা জমি অধিগ্রহন করা হবে মহেশখালি- আনোয়ার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের জন্য। বিগত বছরেই উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের ১ম পর্যায়ের নির্মাণ শেষ করা হয়। সাথে সাথে ২য় পর্যায়ের কাজ শুরু করার টাকা জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। নির্মাণ কাজের জমি অধিগ্রহনের জন্য ইমিমধ্যেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪৬ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। জমি অধিগ্রহনের জন্য ৭ ধারা নোটিশ প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়কের ৩য় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহনের। ঝিলংজায় গড়ে তোলা হবে নতুন বিদ্যুৎ বোর্ড বলে সিদ্ধান্ত হয়। কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্তও হয়। একই উপজেলায় বড়ঘোপও মহেশখালির ঠাকুরতলায় নির্মিত হচ্ছে কোস্টগার্ড ষ্টেশন। সদর উপজেলার তেতৈয়া, চৌফলদন্ডী ও চকরিয়া বাটাখাীলতে নির্মিত হচ্ছে এপ্রোচ রোড। মহেশখালি উপজেলার ধলঘাটা, কালারমারছড়া ও কালিগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং । পেকুয়ার নৌবাহিনীর সাব-মেরিন ঘাটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে সাবমেরিণ ক্যাবল ল্যান্ডিং ষ্টেশন সম্প্রাসরণের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
২০১৫ সালেই অর্থনৈতিকভাবে কক্সবাজারকে সমৃদ্ধ করতে ৭ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩ টি বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে টেকনাফের সাবরাংয়ে নির্মিত হচ্ছে ইকোনমিক জোন। একই উপজেলার জালিয়ার দ্বীপের বেইজা নির্মাণ করছে আরেকটি পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ অর্থনৈতিক অঞ্চল। যা সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বিগত বছরে পরিদর্শণ করেছেন।এছাড়া সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী- পোকখালীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় । এ বছরেই মহেশখালির ধলঘাটা, উত্তর নলবিলা, হামিদ্বরদিয়াও কুতুবজুম, ছোট মহেশখালি, পাহাড় ঠাকুরতলা, গোরকঘাটা, সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গার জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ইতিমধ্যেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া রামুতে আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়াম নির্মানের সিদ্ধান্ত হয়। যার জায়গা ইতিমধ্যেই পরিদর্শণ করেছেন সরকারের উর্ধত্বন মহল।
এছাড়া যোগাযোগ উন্নত করার জন্য রেললাইন লাইন নির্মাণের জন্য জমি গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যা জাপানের সহযোগীতায় নির্মিত হবে। বিগত বছরের জাপান সরকারের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত এলাকা পরির্দশন করেছেন।
০৬ জুলাই পরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন করেন মন্ত্রিসভা। বছর শেষ হয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন দিয়ে । বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারকে তুলে ধরতে বিগত বছরের শেষ দিনে শুর হয় মেগাবীচ কার্নিভাল। যা শেষ হলোও গতকাল।