কক্সবাজারের আদালতগুলো মামলার ভারে জর্জরিত। মামলা জটের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত আরও আদালত বাড়ানো এবং শূন্য পদে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
কক্সবাজারে একটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত, একটি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, দুটি যুগ্ন জেলা জজ আদালত ও সাতটি সহকারী জজ আদালত রয়েছে। এছাড়াও একটি চিফ জুডিশিয়াল আদালত, অতিরিক্ত ও সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ মোট ১২টি আদালত রয়েছে। এসব আদালতে ৭০ হাজার ৩১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৯,৯৯৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে ৬০ হাজার ৩১৫টি মামলা। এর মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০ হাজার ২৬০টি ও ফৌজদারি ১২ হাজার ৬৮৭টি এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৭ হাজার ৩৬৮টি মামলা রয়েছে।
সূত্র মতে, জেলার জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মানুষ মামলার জালে আবদ্ধ। তার ওপর প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার করে নতুন মামলা এবং আসামির সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ একেকটি মামলা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এমনকি অনেক মামলা ১৫ বছরেও নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার বাদী-বিবাদীর মাঝে সামাজিক শত্রুতা বেড়ে যাচ্ছে। এরই জের ধরে ঘটছে আরও অপরাধ।
আদালতে মামলা জট নিরসনে আরএ একটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ২টি যুগ্ম (৩য়) জেলা ও দায়রা জজের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে আইন বিশেষজ্ঞরা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: রুহুল আমিন চৌধুরী রাসেল বলেন, গ্রামীণ জনপদে সংঘঠিত ছোটখাটো সমস্যাগুলো সরাসরি আদালতে পাঠিয়ে না দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা যদি বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে তাহলেই আদালতে মামলা জট কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সাদিকুল ইসলাম যোগদানের পর আগের তুলনায় বেশি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ, নারী নির্যাতন ও মাদকদ্রব্য নিয়ে বেশি মামলা হচ্ছে। কিন্তু সেই হারে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে মামলা জট হচ্ছে।
কক্সবাজারের দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম জানান, আদালতের মামলা জটের সমস্যাটি এখন সৃষ্টি হয়নি। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। আজ থেকে ৬ মাস আগেও বিভিন্ন আদালতে বিচারক সংকট ছিল। এখন বেশির ভাগ আদালতে বিচারক রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে মামলার জট কমতে শুরু করেছে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম আহমদ হোসেন বলেন, মামলা নিরসনে আদালতের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিচারকের সংখ্যাও।
আদালতে আসা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এজন্য আদালতে বিচারক, মামলার বাদী-বিবাদী ও আইনজীবী এবং আইনজীবী সহকারী যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের আরও বেশি সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে। এছাড়াও একদিনেই তো সব মামলা নিষ্পত্তি করা যায় না?’
এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার শত শত বিচারপ্রার্থী আদালতে ভিড় করেছেন। মামলা জটের কারণে অনেকে পরবর্তী তারিখ জেনে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকে নতুন মামলার করার জন্য আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ রকম কয়েকজন ভূক্তভোগিদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
উখিয়ার শফিউল আলম, মিয়া হোসেন, রামুর সোলতান আহমদ, সুদর্ম বড়–য়া ও টেকনাফে আয়েশা বেগম ও পেঠান আলীসহ অনেক বিচারপ্রার্থী জানান, মামলার আসামি হয়ে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে হয়রান। একবার হাজিরা দিতে এলে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়।
তারা আরও জানান, সকালে সঠিক সময়ে আদালতে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তাই আগের দিন কক্সবাজার শহরে চলে আসতে হয়। হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং পরিবহন খরচসহ তাদের চলে যায় দুই হাজারের মতো টাকা। দীর্ঘ দিন ধরে এই আসা-যাওয়া চলছে। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তির কোনও লক্ষণ দেখছেন না তারা।