মানবেতর জীবনযাপন করছে কক্সবাজারের শুটকি পল্লীর হাজারও শ্রমিক। নেই কোন সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতেও পরিবর্তন হয়না ভাগ্য। অধিকার সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা ও শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই তারা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের। অন্যদিকে, শ্রম অধিকার বিষয়ে সচেতন করতে সরকারি বেসরকারি সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
শ্রম অধিকার বা মে দিবসের কোন মূল্য নাই। এ ব্যাপারে জানার কোন আগ্রহ নেই কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক শুটকি পল্লীতে ১২ বছর ধরে কাজ করা মিনু আরা বেগমের।
শুধু মিনুই নন দেশের বৃহত্তম এই শুটকি পল্লীতে কাজ করা ৩০ হাজারের অধিক শ্রমিকের শতকরা ৯০ ভাগেরই ধারণা নেই শ্রম অধিকার সম্পর্কে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে পাওয়া মজুরিতেই টেনেটুনে চলে সংসার। সাপ্তাহিক ছুটি, নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা, ন্যায্য মজুরী পাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্ন তাদের কাছে অবান্তর।
এক কিশোরী শ্রমিক জানান, ‘সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। আর মাছ বেশি থাকলে রাতে দিনে কাজ করতে হয়।’
অন্যরা জানান, শারীরিক অসুস্থার সময়ও ছুটি মেলে না। পনেরো ষোল ঘণ্টা কাজ করেও সেভাবে পারিশ্রমিক পান না বলে জানান তারা।
কক্সবাজারে শ্রম আদালত বা শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় শ্রমিকরা শ্রম অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের।
জাতীয় শ্রমিক লীগ (কক্সবাজার) সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারে যেহেতু কোন শ্রমিক আদালত নেই এবং শ্রমিক পরিদর্শক নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো, কক্সবাজারে যেনো একটি শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।’
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানালেন, শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও।
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে শ্রম অধিদপ্তরের লোকজন সম্মিলিতভাবে যদি এই শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে যদি একটু সোচ্চার হয় তাহলে তাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সহজ হবে।’
এছাড়া ‘শ্রম আইন সংস্কার ও শুটকি শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণের পাশাপাশি তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।