‘জোহরের নামাজ পড়ে বাজারঘাটা থেকে মোটর সাইকেলযোগে রওয়ানা দিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৩ ঘন্টা। তাও সংকীর্ণ পথ ধরে এদিক-ওদিক ঘুরে গন্তব্যে আসা।’
কথাগুলো সিঙ্গারের কক্সবাজারের জেলা ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমানের। তিনি জানান, কক্সবাজার শহরে এমন যানজট গত ঈদ ও থার্টি ফার্স্টের সময়েও দেখা যায়নি।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়ের হোটেল শাহজাদীর স্বত্ত্বাধিকারী নাজিমউদ্দিন শনিবারের ট্রাফিক জ্যাম সম্পর্কে বলেন- ‘কক্সবাজার শহরে যানবাহনের এমন চাপ গত ১০ বছরেও দেখিনি।’
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি তুহিন কবীর ও সানজিদা কবীর জানান, তারা সকালে শহরে পৌঁছে দুপুরে খাবার-দাবারের পর বার্মিজ মার্কেটে গিয়েছিলেন। আশা ছিল, কেনাকাটা করে বিকালে সূর্যাস্ত দেখতে সমুদ্র সৈকতে যাবেন। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামের কারণে তাদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।
চট্টগ্রামের পর্যটক নাসির চৌধুরী বলেন- কক্সবাজার শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে যে সময় লাগে, একই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে আসা যায়।
টানা ৩দিনের সরকারী ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এমনই যানবাহনের ¯্রােত ছিল গতকাল। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশও শহরে দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এতকিছুর পরও যানজট পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শহরতলীর কলাতলী মেরিন ড্রাইভে যানজট নিরসনে দায়িত্বে নামে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেনাসদস্যদের দীর্ঘ চেষ্টাতেও মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। মেরিন ড্রাইভের কলাতলী অংশটি খুবই সংকীর্ণ হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। শহরের কলাতলী সড়কটি অপেক্ষাকৃত চওড়া হলেও যানবাহনের চাপে সেই সড়কটিও ছিল অচল প্রায়।
হোটেল মালিকরা জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় টানা ছুটিতে গতকাল একদিনেই প্রায় দেড়লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। এদের মধ্যে যারা আগাম হোটেল বুকিং করে আসেননি, তাদেরকে রাতেই ফিরে যেতে হয়েছে। আবার ফিরে যেতে গিয়ে টিকেট পেতেও পোহাতে হয়েছে বেশ ভোগান্তি।
গতকাল কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছে বলে জানান হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এমনকি গত ঈদের বন্ধেও এত পর্যটক কক্সবাজারে আসেনি।
পর্যটকদের যানবাহনের এমন চাপে সৃষ্ট ট্রাফিক জ্যামের কারণে চরম বিরক্ত শহরবাসী। তারা একই সঙ্গে এত পর্যটকের কক্সবাজারে আগমনকে স্থানীয়দের জন্য চরম ভোগান্তিমূলক বলে মনে করেন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট প্রশস্ত করার মাধ্যমে যানজট নিরসনের দাবী জানান। অন্যথায় খুব শীঘ্রই রাজধানীর মতই যানজটে অচল হয়ে পড়বে কক্সবাজারবাসী।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন- ‘পুলিশ শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু অপর্যাপ্ত ও সংকীর্ণ সড়কের কারণে যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।