কক্সবাজারে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিবন্ধনের কাজ চলছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ নিবন্ধনের কাজ চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এই পাঁচ দিনে সংগৃহীত তালিকা যাচাই বাছাই শেষে মার্চের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর তাদেরকে একটি আলাদা পরিচয়পত্র দেয়া হবে। তবে পরিচয়পত্রে কি ‘মিয়ানমার নাগরিক’ লেখা থাকবে নাকি শুধু ‘রোহিঙ্গা’ লেখা হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, রোহিঙ্গা নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮১ জন কর্মী (গণনাকারী), ১০৮ জন সুপারভাইজার এবং ৪৯ জন জোনাল অফিসার নিয়োগ দিয়েছে জেলা পরিসংখ্যান অফিস। গতকাল শনিবার এই নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় অবস্থিত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জীবন প্রণালীর খোঁজ খবর নেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমা। এসময় তিনি চলমান শুমারীর গুরুত্ব উপস্থাপন করে এতে সকলকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান জানান।
পরিদর্শনকালে পরিসংখ্যান সচিব রোহিঙ্গাদের আয়-রোজগার, খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাদীক্ষাসহ মৌলিক অধিকারের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। আর সচিবকে কাছে পেয়ে অভাব অভিযোগের কথা মন ভরে তুলে ধরেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সরকারের পদক্ষেপের কথা রোহিঙ্গাদের অবগত করেন। পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মো. সফিকুল ইসলাম, জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নুরুল কবির, আরাকানী রোহিঙ্গা শরণার্থী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল আমিন, সহ-সভাপতি মাস্টার আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহ, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা ও নেজাম উদ্দিন প্রমুখ।
রোহিঙ্গা নাগকিরদের এদেশে অনুপ্রবেশের কারণ চিহ্নিত করতে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি, তাদের ছবি ও দলিলাদি সংগ্রহ, বর্তমান অবস্থান, এদেশে অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারের স্থায়ী বাসস্থান নিরূপণ এবং আর্থসামাজিক পরিসংখ্যানই শুমারির প্রধান লক্ষ্য। চলমান শুমারী কার্যক্রমের ফলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও এ শুমারীর কারণে উপকৃত হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের মার্চ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রোহিঙ্গা শুমারী প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা যথাক্রমে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে এই শুমারী পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে আরাকানী রোহিঙ্গা শরনার্থী কল্যাণ পরিষদ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে তারা সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম-কানুন মেনে চলার তাগিদ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি, মৌলবাদ জঙ্গীবাদমুক্ত একটি অসম্প্রদায়িকতা উজ্জ্বীবিত নিরাপদ রোহিঙ্গা সমাজ বিনির্মাণে তারা কাজ করছে বলে সংগঠনটির সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল আমিন জানান।