প্রথম পর্যায়ে আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কক্সবাজারের ১৯ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ইতিমধ্যেই সব ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তবে তাদের প্রার্থী তালিকায় বিএনপি নেতা, ইয়াবা ব্যবসায়ী, জঙ্গী নেতা ও রাজাকার পরিবারের সন্তানসহ বিতর্কিত অনেকের নাম অর্ন্তভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর সে কারণে অর্ধেকেরও বেশি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা এসেছে তৃণমূল থেকে।
আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, মহেশখালী পৌরসভায় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধ মামলার ২২ নং আসামী বড় মোহাম্মদের পুত্র মকসুদ মিয়াকে। তার পরিবারের ভূমিকার জন্য একাত্তরে নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবারের পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডকে ইতোমধ্যে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তা উপেক্ষা করে মকসুদ মিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ায় মহেশখালীর প্রথম মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা সরওয়ার আজম নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে চকরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রেজুলেশনের ভিত্তিতে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরীর নাম জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জেলা থেকে কেন্দ্রে প্রেরিত তালিকায় এই দুই জনের নাম বাদ দিয়ে অন্য ৫ জনের নাম পাঠানো হয়। কেন্দ্র থেকে আলমগীর চৌধুরী নামের অপেক্ষাকৃত অপরিচিত এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর শ্রমিক নেতা ফজলুল করিম সাঈদী নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নে তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান তারেক বিন ওচমান শরীফ। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারেকের পিতা ওচমান চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামী সেলিম চৌধুরীকে। সে কারণে মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারেক বিন ওচমান শরীফ।
মাতারবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রেজুলেশনের মাধ্যমে জানিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুল ব্যতিত অন্য যে কাউকে প্রার্থী করা হলে তাকে মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু সেই এনামুল হক রুহুলকে প্রার্থী ঘোষণা করায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মাহমুদুল্লাহ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ধলঘাটা ইউনিয়নে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে হত্যা, দুর্নীতিসহ বহু মামলার আসামী বিতর্কিত ব্যক্তি আহসান উল্লাহ বাচ্চুকে। আর সে কারণে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের পুত্র সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান।
প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। সে কারণে একক প্রার্থী মনোনয়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় একাধিক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সবদিক বিবেচনা করে যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছ্ইু ছিলনা।
একইভাবে কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নে বিএনপি থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আলাউদ্দিন আল আজাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়। টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ও জঙ্গী মদদদাতা হিসেবে অভিযোগ থাকা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মৌলানা আজিজ উদ্দিনকে। তার মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুব উল্লাহ। সাবরাং ইউনিয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুর হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সাবরাং ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা সোনা আলী ও হাবিবুর রহমান। এছাড়া মনোনয়ন না পেয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর চৌধুরী। এভাবে প্রথম পর্যায়ের দলীয় প্রতীক নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর যেমন ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে তেমনি বিতর্কিত ব্যক্তিরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।