কক্সবাজারে জেলা জজসহ ৫ বিচারক পদ শূন্য : ৬৫ হাজার মামলার স্তুপ
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬
২৬০
বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজার আদালতের সর্বোচ্চ বিচারক জেলা জজ নাই ৩ মাস ধরে। এতে বিচারপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তিসহ বিচারিক কাজেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। এছাড়া ১ জন যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আর ৩ জন সহকারী জজ নাই। যার ফলে কক্সবাজারের প্রায় ৬৫ হাজার মামলার জট কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। সংশ্লিষ্টদের দাবী বিজ্ঞ জেলা জজ না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, আবার অনেক জামিনযোগ্য আসামিও জেল খাটছেন। আর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতেও অসংখ্য নিয়মিত মামলা আছে তার উপর জেলা জজ আদালতের সব মামলা এখানে থাকায় সেখানেও বিচারিক কার্যক্রম চালাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানিয় সংসদ সদস্য এবং আইনজীবী সমিতির ভূমিকা বেশি বলে জানান অনেক আইনজীবী। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে বদলী হলে সে থেকে কক্সবাজারে নতুন জেলা জজ পদায়ন করা হয় নি। যার ফলে সে থেকে জেলা জজ নাই। এছাড়া কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মোট মঞ্জুরীকৃত পদ হচ্ছে ১১ টি। এরমধ্যে বর্তমানে জেলা জজ ছাড়াও ১ জন যুগ্ন জেলা জজ আর ৩ জন সহাকরী জেলা জজ নাই। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে বিভিন্ন আদালতে মামলার সংখ্যাও প্রায় ৬৫ হাজার। এরমধ্যে সিভিল মামলা ১৯ হাজার ৬৩১টি, ফৌজদারী মামলা ১৩০৮৪টি আর ম্যাজিস্ট্রেসি মামলা আছে ২৬ হাজার ৯৭৫ এবং নারী শিশু জজ আদালতেও মামলার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এ ব্যাপারে এড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে জেলা জজ না থাকায় সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা খুব ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। মামলার নির্ধারিত দিন থাকে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা আসে, পরে শুধু পরবর্তি তারিখ নিয়ে যায়। আবার দেখা যায় অনেক জামিনযোগ্য মামলাও আছে যেগুলো ঠিকমত শুনানী না হওয়ার কারনে আসামি জেল হাজতে আছে। মোটকথা জেলা জজ হচ্ছে কক্সবাজারের বিচার কার্যক্রমের প্রধান, যদি তিনি না থাকেন তাহলে কি পরিমান সমস্যা হবে সেটা বলার কোন অবকাশ নেই। এপিপি এড. জিয়া উদ্দিন বলেন, এতদিন জেলা জজ না থাকা খুবই দঃখজনক। কক্সবাজারের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় বিচার কার্যক্রমের প্রধান ব্যক্তি নাই অথচ কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। এসব বিষয়ে স্থানিয় সংসদ সদস্য এবং জেলা আইনজীবী সমিতির ভূমিকা বেশি আশা করে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন কত মানুষ যে বিচারের ধার্য্য তারিখ দিনে এসে চলে যাচ্ছে সেটা না দেখলে বলা মুশকিল। যে কোন ভাবেই হওক দ্রুত জেলা জজসহ অন্যান্য বিচার পদায়ন করা দরকার। এতে সাধারণ মানুষের খুব উপকার হবে। এ ব্যাপারে সাবেক পিপি এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, একটি আদালতে জেলা জজ না থাকা মানে কিছুই না থাকা। কারন উনার নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধান হচ্ছে অনেক কিছু। এছাড়া আমার দেখা মতে অনেক মামলার সাক্ষি দেওয়ার দিন আছে সেগুলো সাক্ষি না হওয়ায় মামলা স্থবির হয়ে আছে। তাছাড়া অনেক জামিন শুনানী আছে যে গুলো জামিনযোগ্য কিন্তু জজ না থাকায় তারাও জেল থেকে বের হতে পারছে না। তিনি বলেন, আসলে আমাদের যোগ্য নেতৃত্বের বড় অভাব। যদি এই ঘটনা উত্তর বঙ্গের কোন জেলায় হতো তা হলে এতদিনে সংসদে কয়েক বার আলোচনা হত। আর আইন মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার তদবীর হতো। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের বড় ভাগ্য খারাপ। মামলা জটের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থার কিছু ত্রুটির কারনে মামলা জট বাড়ছে। আর সামাজিক বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা গেলে আদালতে মামলা জট কমবে বলেও জানান তিনি। আর জন প্রতিনিধি এবং আইনজীবীদের ও এখানে অনেক কিছু করার আছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. ছৈয়দ আলম বলেন, ৩ মাস মত জেলা জজ না থাকার মত ঘটনা খুবই বিরল। এর ফলে সাধারণ বিচার প্রার্থীরা খুবই হয়রানীর শিকার হচ্ছে। যে কোন ভাবেই জেলা জজ পদায়ন করার ব্যবস্থা করা দরকার। এব্যাপারে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মোঃ ইসহাক বলেন, এবিষয়ে আমরা কয়েকবার আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি সামনে এটা জোর তদবির করতে হবে। তিনি বলেন, জেলা জজ না থাকা মানে বিচার ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসা।