নিউজ নেটওয়ার্ক নামের একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে তৃণমূল সাংবাদিকদের ৫ দিনের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মশালা। আর এই কর্মশালায় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘দলবাজি’, ‘চেতনাবাজি’ ও ‘ব্যক্তিপ্রীতি’র অভিযোগ উঠেছে। ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ এই কর্মশালার বিষয় হলেও সাংবাদিক নির্বাচনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার’ দুটোই লংঘন করা হয়েছে।
জাতিসংঘভূক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইউএনডিইএফের অর্থায়নে ঢাকার নিউজ নেটওয়ার্ক এই কর্মশালার আয়োজন করলেও কক্সবাজারেরই দীপক শর্মা দীপু নামের এক সংবাদ কর্মী তার ইচ্ছামতো সাংবাদিক বাছাই, ভিন্নমতের সাংবাদিক ও ভিন্নমতের সাংবাদিকদের সাথে সম্পর্ক আছে এমন সংবাদ কর্মীদের এই কর্মশালা থেকে বাদ দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, দীপু নামের ওই সংবাদ কর্মীর সাথে কখন কার সাথে মতবিরোধ ছিল, তার প্রিয়ভাজনদের সাথে কোথায় কার মনোমালিন্য ছিল সেই প্রতিহিংসাও চরিতার্থ করা হয়েছে কর্মশালার অংশগ্রহণকারিদের তালিকা বাছাইয়ে।
ভূক্তভোগী সাংবাদিক ও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারি একাধিক সংবাদ কর্মীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের অভিযোগ, শুধু এবার নয়, ইতিপূর্বেও ওই বেসরকারি সংস্থার সাংবাদিক কর্মশালা নিয়ে দীপক শর্মা দীপু ‘দলবাজি’, ‘চেতনাবাজি’ ও ‘ব্যক্তিপ্রীতি’র আশ্রয় নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউজ নেটওয়ার্ক নামের বেসরকারি ওই সংস্থাটি সারাদেশে তৃণমূল সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করে। কয়েক বছর আগে ওই সংস্থাটি কক্সবাজারে সাংবাদিকদের কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার আবদুল কুদ্দুস রানার সহযোগিতা চেয়েছিল। তিনি সময় দিতে না পারায় দীপক শর্মা দীপু নামের ওই সংবাদকর্মীকে ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে ট্যাগ করে দেন।
সূত্র মতে, দীপক শর্মা দীপু ওই সুযোগটাকেই অপব্যবহার করে বারবারই এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়ে দলবাজি, চেতনাবাজি ও ব্যক্তিপ্রীতি করে যাচ্ছেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, এবারও প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশগ্রহণকারির তালিকা তৈরির জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এবারও তার দলবাজি ও ব্যক্তিপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।
সূত্রগুলো মতে, কক্সবাজার শহর থেকে ১৯টির বেশি দৈনিক সংবাদপত্র বের হয়। এছাড়াও জাতীয় পত্রিকা ও নিউজ এজেন্সীতে কর্মরত সাংবাদিককরাও রয়েছে। এদের মধ্য থেকে প্রতিটি স্থানীয় পত্রিকা থেকে একজন করে প্রতিনিধি এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করানোর বিধান ছিল। কিন্তু ওই দীপু কক্সবাজার শহর থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকা থেকে নিজের পছন্দ মতো সংবাদ কর্মীর তালিকা করেন। ভিন্ন মতের মনে করা হয় এমন সংবাদপত্রগুলোকে এই কর্মশালার বিষয়ে জানানোই হয়নি।
এই প্রতিবেদক দৈনিক হিমছড়ি, দৈনিক সৈকত ও দৈনিক সাগর দেশ কর্তৃপক্ষসহ বেশ কয়েকজন উদীয়মান সাংবাদিকের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, বিদেশি অর্থায়নে ৫ দিনের বুনিয়াদী কর্মশালা কক্সবাজারে আয়োজন হলেও তাদের জানানোই হয়নি। অথচ কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত বাম ঘরানার প্রতিটি সংবাদপত্রের সম্পাদককে ফোন করে প্রতিনিধি দেয়ার জন্য বলেছিলেন ওই দীপুই।
অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত একটি বাম ঘরানার পত্রিকা থেকে কর্মশালার জন্য প্রতিনিধি চাওয়া হলে সম্পাদক একজন প্রতিনিধি দেন। ওই প্রতিনিধিকে তালিকাভূক্তও করা হয়। কিন্তু তার একদিন পর দীপক শর্মা দীপু ফোন করে ওই প্রতিনিধিকে জানান, তার ঢাকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে!
প্রশ্ন উঠেছে, তরুণ ওই সংবাদ কর্মীকে বাদ দিয়ে সম্পাদকের কাছে নতুন প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়েছিল। তবে কী ওই তরুণ কোন কারণে ‘বিখ্যাত’ হয়ে গেছে যে, তাকে নিউজ নেটওয়ার্কের ঢাকার কর্মকর্তারা পর্যন্ত চিনে ফেলেছেন!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাতে ওই প্রতিনিধির নামই পাঠানো হয়নি। আর ঢাকা থেকে তালিকাভূক্ত কারো নাম বাদ দেয়া হয়নি।
সূত্র মতে, ওই লোকাল পত্রিকার সেই প্রতিনিধির একটিই অপরাধ ছিল, ভিন্নমতের সাংবাদিকদের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।
আরও অভিযোগ উঠেছে, এটি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ হলেও শুধুমাত্র দীপুর সাথে সম্পর্কের কারণে প্রবীণ অনেক সাংবাদিককেও ওই কর্মশালায় সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর তার সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকায় অনেককেই বাদ দেয়া হয়েছে।
সূত্র গুলো মতে, প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্থানীয় পত্রিকা থেকে একজন প্রতিনিধি থাকার নিয়ম থাকলেও দীপক শর্মা দীপু তার ইচ্ছে মতো একটি পত্রিকা থেকে দুইজন, এমন কি তিনজনকেও সুযোগ দিয়েছেন।
এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীপক শর্মা দীপু এই কর্মশালায় এমন দুইজনকে সুযোগ দিয়েছেন যাদের কোন সাংবাদিকই চেনেন না।
অন্যদিকে অভিযোগ মিলেছে, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারিদের ৫ দিনের জন্য ৫ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা ছিল। অথচ ওই দীপকই কক্সবাজারে আসা নিউজ নেটওয়ার্কের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে সেই ভাতা মাত্রই দুই হাজার টাকা করে ফেলা হয়েছে।
এদিকে এই কর্মশালা নিয়ে ‘দলবাজি’, ‘চেতনাবাজি’ করা হলেও কর্মশালার ভেন্যুর সুযোগ নেয়া হয়েছে ভিন্নমতের এক রাজনৈতিক নেতার ব্যবসা প্রতিষ্টানে।
এ ব্যাপারে নিউজ নেটওয়ার্কের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।