ছয়তলার চেয়ে বেশি বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। পর্যটন শহর কক্সবাজারে এ রকম বহুতল ভবন রয়েছে চার শতাধিক। তারমধ্যে আবাসিক হোটেল রয়েছে অন্তত চার’শ। কিন্তু এর মধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৬টির। পাশাপাশি এসব বহুতল ভবনে বর্জ্য পরিশোধনাগারের (এসটিপি) কোন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে জেলার প্রধান নদী বাকঁখালী ও বঙ্গোপসাগরের পানি। তাই পর্যটন এলাকার পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে বহুতল ভবনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ টি আবাসিক হোটেলকে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগাম বিভাগীয় পরিচালক মো: মকবুল হোসেন এ নোটিশ দেন। নোটিশে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার ২০ আবাসিক হোটেল মালিককে ২১ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, সুগন্ধা গেষ্ট হাউজের মালিক আবু সোলতান, আর এম গেষ্ট হাউজের মালিক মো: এ নুরুচ্ছফা, স্বপ্ন বিলাস হলিডে সুইটস এর মালিক আরিফুর রহমানকে ২১ মার্চ, জিয়া গেষ্ট হাউজের মালিক ওমর সুলতান, এ আর গেষ্ট হাউজের মালিক হাফেজ মো: ইসহাক, সী-পার্ল ১ ও ২ এর মালিক লায়ন মো: শামশুল আলম, সী-ওয়েস্টারের মালিক রশিদ আহম্মেদকে ২৪ মার্চ, আলীগড় হলিডে সুইটস এর মালিক মাসুদ রানা, শাকিরা বীচ রিসোর্ট এর মালিক সৈয়দ নজরুল কবির, সী-এফ রিসোর্টের মালিক লায়ন মো: শামশুল আলম, ব্লু ওশান রিসোর্ট এর মালিক মো: শোয়েবকে ২৯ মার্চ, সী-ওয়েলকাম রিসোর্ট এর মালিক শিহাব উদ্দিন আহম্মেদ, রীম রিসোর্ট এর মালিক মো: ইসমাইল, লাইট হাউজ ফ্যামেলি রিসোর্ট এর মালিক ডা: হোসনেআরা, হাইপেরিয়ান হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর মালিক লায়ন মো: শামশুল আলমকে ৪ এপ্রিল এবং ক্ল্যাসিক সী-রিসোর্ট এর মালিক আবুল কালাম, এ বি গার্ডেন এর মালিক মো: ওবায়দুল্লাহ ও ব্লু গ্র্যান্ড বীচ রিসোর্ট এর মালিক মো: সরওয়ার কামালকে ১১ এপ্রিল স্ব-শরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো: মকবুল হোসেন বলেন, কক্সবাজারে কোন বহুতল ভবনে বর্জ্য পরিশোধনাগার (এসটিপি) নেই। যার কারণে এসব হোটেলের বর্জ্য প্রতিদিন জেলার প্রধান নদী বাকঁখালী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। এতে নদী ও সাগরের পানিও দুষিত হচ্ছে। তাই পর্যটন এলাকার পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে যত্র-তত্র গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিক ভাবে ২০ টি আবাসিক হোটেল মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। ওই দিন পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন করে জরিমানা করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য হোটেলগুলোকেও নোটিশ দেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী বহুতল আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ’৯৬-এর ১২ নং ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ভবন মালিকরা নিয়ম মানছেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবনের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকা অনুযায়ী ভবন মালিকদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়ার জন্য। তবে লোকবল কম হওয়ায় আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান বলেন, ‘আমরা যখন হোটেল নির্মাণ করেছি, তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের যে প্রয়োজন তা জানা ছিলনা। তাই পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া হয়নি।