মিয়ানমারের বিদ্রোহী জঙ্গী সংগঠন আরএসও ফের কক্সবাজার ও বান্দরবানে সংগঠিত হচ্ছে। অত্যন্ত গোপনে সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মায়ানমারের বিদ্রোহী জঙ্গী সংগঠন আরএসও’র ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত কঙ্বাজার ও বান্দরবান জেলা। বিগত জোট সরকারের আমলে এ সংগঠনের ঘাঁটিগুলো উৎখাত করলেও দীর্ঘদিন সংগঠনের সদস্যরা আত্মগোপনে ছিল। সমপ্রতি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লেমুছড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলে আরএসও ক্যাম্প স্থাপন করে ৪০ সদস্যের নিয়মিত উক্ত ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বলে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানা যায়, জঙ্গী সংগঠন আরএসও’র শীর্ষ নেতারা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অবস্থান করে উক্ত সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফের দমদমিয়া শরণার্থী ক্যাম্প ও উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে উক্ত সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে আরএসও’র নেতা ও অপারেশন অফিসার মৌলভী নুর হোছন (৩৮) বর্তমানে চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থান করে তার নেতৃত্বে আবু বক্কর (৪৮) উক্ত সংগঠনের যাবতীয় অর্থ যোগান দিচ্ছে। কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প বস্নক-এ, শেড নং- ৪৪ এর ইছা খলিল (৪৫) ও তার ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫) এবং আনোয়ারের নেতৃত্বে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ২০/২৫ জনের মত আরএসও জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা অবস্থান করছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত শুক্রবার আরএসও’র সদস্যরা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এক শরণার্থী যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। তাছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারীরা ক্যাম্পের ভিতরে প্রবেশ করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করলে কুতুপালং ক্যাম্পের এ বস্নকের আবুল কালাম (৪০), বি বস্নকের আলী আহম্মদ (৪৮) সহ ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। তবে আবুল কালাম ও আলী আহম্মদের পিঠে ও বুকে গুলি লাগায় তাদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে দুই ব্যক্তি মারাত্মক জখম হলে শরণার্থী শিবির থেকে তাদেরকে উখিয়া সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলেও ঐসব অস্ত্রধারীদের অব্যাহত হুমকির কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না আহতরা। বর্তমান ক্যাম্পের ভিতরে কোন রকম এনজিও দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। উক্ত বিদ্রোহী সংগঠনে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ গোলাগুলির ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় শরণার্থীরা আতংকের মধ্যে রয়েছে।
জানা গেছে, মিয়ানমার বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও’র ঘাটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লেমুছড়ীতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ আইয়ুব আলী। স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখকে ফাঁকি দিয়ে উক্ত আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে লেমুছড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে আরএসও সদস্যদের রীতিমত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। কমান্ডার আইয়ুব আলী ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে বিলাসবহুল বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করলেও তার নেতৃত্বে কঙ্বাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন গভীর অরণ্যে আরএসও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রেখেছে তারা।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, গুলিবর্ষণের ঘটনায় আরএসও সদস্য ইউনুছ ও জিয়াউর রহমানসহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া ক্যাম্প এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মাহমুদুল হক জানান, ক্যাম্পের ভিতরে অতর্কিত গুলিবর্ষণের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশী টহল সহ গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।